আলেকজেন্ডার পোপ (২১ মে ১৬৮৮ – ৩০ মে ১৭৪৪) অষ্টাদশ শতকের একজন ইংরেজ কবি। ব্যঙ্গাত্মক ও প্রহসনমূলক লেখার জন্য তিনি জনপ্রিয়। ইংরেজি সাহিত্যের হিরোয়িক কাপলেট ধাঁচের লেখার জন্য তিনি বিখ্যাত। ‘দ্যা অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব কোটেশানে’ সেক্সপিয়ারের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোটেশান তার লেখা থেকে নেয়া হয়েছে। তিনিই প্রথম মহাকাব্য ইলিয়াডের ইংরেজিতে অনুবাদ করেন।
আলেকজেন্ডার পোপের পিতার নাম আলেকজেন্ডার পোপ সিনিয়র (১৬৪৬ – ১৭১৭)। তিনি ছিলেন একজন কাপড় ব্যবসায়ী। লন্ডনের লম্বার্ড স্ট্রীটে তার দোকান ছিল। তার মাতার নাম এডিথ (নি টার্ণার) (১৬৪৩-১৭৩৩)। তারা দুজনেই ছিলেন রোমান ক্যাথলিক। সেই সময় ক্যাথলিকদের উপর আরোপিত টেস্ট এ্যাক্ট এর কারণে শৈশবে পোপের লেখাপড়া ব্যাহত হয়। সেই সময়ে এই আইনের আওতায় ক্যাথলিকদের জন্য শিক্ষকতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, ভোটপ্রদান অথবা জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার রহিত করা হয়। পোপ এই সময় তার মাসির কাছে লেখাপড়া শুরু করেন। পরে তিনি দুইটি ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। অবৈধ হলেও লন্ডনের কিছু কিছু জায়গায় এ ধরনের স্কুল ছিল। সেই সময় সমগ্র ইংল্যান্ড জুড়ে ক্যাথলিক বিদ্বেষ দানা বেঁধে উঠেছিল। প্রোটেস্ট্যান্টরা লন্ডন বা ওয়েস্ট মিনিস্টার শহরের ১৬ কি.মি. এর মধ্যে ক্যাথলিক বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করত। এই কারণে ১৭০০ সালে পরিবারের সাথে তিনি রয়েল উইন্ডফরেস্ট এর কাছে বিনফিল্ড এর পোপসউড এ চলে আসেন। গ্রামাঞ্চলের- তার নতুন আবাস্থলের বর্ণনা তার ‘উইন্ডসর ফরেস্ট’ কবিতায় পাওয়া যায়। বিনফিল্ডে আসার পর তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যের ক্লাসিক লেখাগুলো পড়তে শুরু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জিফরি চসার, উইলিয়াম সেক্সপিয়ার, হোমার, ভার্জিল, হোরাক ও জুভেনাল। বিনফিল্ডে তার প্রচুর বন্ধু ও শুভাকাঙ্খি তৈরী হয়। যারা পরবর্তিতে তার জীবনে বিভিন্নভাব অবদান রেখেছিলেন। জন ক্যারিল ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি পোপের চেয়ে ২০ বছর বড় ছিলেন। তরুণ পোপকে তিনি নাট্যকার উইলিয়াম উইচারলি এবং কবি উইলিয়াম ওয়ালস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পোপের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি তারা সম্পাদনা করেছিলেন।
১৭০৯ সালের মে মাসে তার লেখা প্যাস্টোরালস্ প্রকাশিত হয়। এই লেখা রাতারাতি তাকে খ্যাতি এনে দেয়। ১৭১১ সালে প্রকাশিত হয় এসে অন ক্রিটিসিজম। এই লেখাটিও সমানভাবে সমাদৃত হয়।
১৭১১ সালের দিকে জন গে, জোনাথন সুইফট, থমাস পার্ণেল এবং জন আরবাটনট কে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন স্ক্রিবিলারুস ক্লাব। ব্যঙ্গাত্মক সাহিত্যে এই ক্লাবের সদস্যদের অবদান ছিল। এরপর তিনি গ্রিক মহাকাব্য হোমারের ইলিয়াড এর ইংরেজি অনুবাদের কাজে হাত দেন। পরিশ্রমসাধ্য এই কাজটি তিনি শুরু করেন ১৭১৫ সালে এবং শেষ করেন ১৭২০ সালে। হোমারের অনুবাদকর্ম থেকে তার কিছু অর্থ সমাগম হয়। সেই টাকা দিয়ে তিনি ১৭১৯ সালে টুইকেনহামে ‘গ্রটো এন্ড গার্ডেন’ নামে সুড়ঙ্গ এবং বাগানসহ একটি দৃষ্টি নন্দন ভিলা নির্মাণ করেন। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর ও স্ফটিক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই প্রমোদ ভিলাটি। বাগান আর বাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হলেও সুরঙ্গটি র্যাডনর হাউজ ইনডিপেনডেন্ট কো-এড স্কুলের নিচে এর অস্তিত্ব এখনও আছে। মাঝে মাঝে স্থানটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। পোপের সর্বাধিক জনপ্রিয় কবিতা হল ‘দ্যা রেপ অব দ্যা লক’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৭১২ সালে। এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক লেখা। উচ্চবংশীয়দের মধ্যে কলহ-বিবাদ ছিল এই কাব্যের মূল উপজিব্য। তার আর একটি রচনা, ‘এসে অন ম্যান’ একটি দার্শনিক কাব্য। প্রকাশিত হয় ১৭৩২ থেকে ১৭৩৪ সালের মধ্যে।
১৭৪৪ সালের ৩০ শে মে টুইকেনহামের নিজ ভিলায় তিনি মারা যান। টুইকেনহামের চার্চ অব ইংল্যান্ডের সেন্ট মেরী দ্যা ভর্জিন এর সমাধিক্ষেত্রে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।
সূত্র: উইকিপিপিডিয়া
আমারবাঙলা/ইউকে