আজ ৮ সেপ্টেম্বর নজরুলসংগীতশিল্পী ইয়াসমিন মুশতারীর জন্মদিন। এ বিশেষ দিনে তিনি দেশ-বিদেশের ভক্ত, দর্শক-শ্রোতা, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য উপহার দিলেন একটি বিশেষ উদ্যোগ—‘ডিজিটাল আর্কাইভ অব ইয়াসমিন মুশতারী’। এই ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলো তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য সংগীতজীবন, শিল্পকর্ম ও অর্জনের প্রায় সব তথ্য। ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে পাওয়া যাবে শিল্পীর জীবনী, গান, অডিও–ভিডিও, পুরস্কার, অ্যালবামের তথ্য, সংবাদ, সাক্ষাৎকার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নানান আর্কাইভাল উপাদান।
ইয়াসমিন মুশতারী জানালেন, ছোটবেলা থেকে তিনি সংগীতচর্চা, পরিবেশনা ও শিক্ষাদানে ব্যস্ত থেকেছেন। ব্যক্তিগতভাবে নিজের কাজ সংরক্ষণের তেমন সুযোগ না পেলেও মনের ভেতর একটি ইচ্ছা দীর্ঘদিন ধরে লালন করেছেন—নিজের কর্ম ও অর্জনগুলোকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে নথিভুক্ত করা। তাঁর ভাষায়, ‘আজকাল ইন্টারনেটে নামের বানান থেকে শুরু করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এতে শিল্পী বা গণমাধ্যমের মানুষ বিভ্রান্তির শিকার হন। নিজের ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যখন সবকিছু সঠিকভাবে থাকবে, তখন ভক্ত ও গবেষকেরা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাবেন।’
এই ওয়েব প্ল্যাটফর্মটির কনসেপ্ট ও ডেভেলপমেন্ট করেছে আইটি প্রতিষ্ঠান ‘ভার্সডসফট লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংগীতশিল্পী ফাহিম ফয়সাল জানান, আমাদের দেশে অনেক শিল্পী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বের নিজস্ব কোনো ওয়েব আর্কাইভ নেই। অথচ এটি সময়ের দাবি। গবেষণা, তথ্য সংরক্ষণ ও প্রফেশনাল গ্রহণযোগ্যতার জন্য এ ধরনের আর্কাইভ অপরিহার্য। তাঁর মতে, শুধু তৈরি করলেই হবে না, নিয়মিত মেইনটেইন করতে হয়। এতে শিল্পীর সব আপডেট ও ইতিহাস একই সঙ্গে সংরক্ষিত থাকে।
ইয়াসমিন মুশতারী উপমহাদেশের অন্যতম নজরুলসংগীতশিল্পী হিসেবে খ্যাত। পাশাপাশি তিনি রাগাশ্রয়ী গান ও গজল পরিবেশন করেন। ৮ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এক সাংস্কৃতিক পরিবারে। তাঁর বাবা কবি তালিম হোসেন নজরুল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, আর মা মাফরুহা চৌধুরী ছিলেন সাংবাদিক ও কথাশিল্পী। বড় বোন শবনম মুশতারী নজরুলসংগীতে কিংবদন্তি, আরেক বোন পারভীন মুশতারীও দেশের সংগীতজগতে পরিচিত নাম। সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় ১০ বছর বয়সে, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ খানের কাছে। পরবর্তী সময়ে সোহরাব হোসেন, সুধীন দাস, ফিরোজা বেগম ও শেখ লুতফুর রহমানের কাছে নজরুলসংগীতে তালিম নেন। গজলে তালিম নিয়েছেন কিংবদন্তি ওস্তাদ মেহেদী হাসানের কাছে। তিনি ইয়াসমিন মুশতারীকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
শিল্পীর সংগীতযাত্রা সমৃদ্ধ হয়েছে নানা পুরস্কার ও সম্মাননায়। তিনি ছিলেন বিটিভির ‘নতুন কুঁড়ি’র চ্যাম্পিয়ন। নজরুল একাডেমির সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘সুর সাকী’ (নজরুল ও উচ্চাঙ্গসংগীতে গোল্ড মেডেল) লাভ করেছেন। তিনবার পেয়েছেন চ্যানেল আই-এর শ্রেষ্ঠ নজরুলসংগীত শিল্পীর পুরস্কার। পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া থেকে ‘চুরুলিয়া নজরুল পদক’, বাংলাদেশ নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে জাতীয় নজরুল পদকসহ দেশ-বিদেশের আরও বহু স্বীকৃতিতে ভূষিত হয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে ইয়াসমিন মুশতারী স্বামী মুশতাক আহমদের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। তাঁদের এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তান রয়েছে। জন্মদিনের দিনে ডিজিটাল আর্কাইভ চালুর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের সংগীতভুবনকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও সহজলভ্য করলেন।
আমারবাঙলা/জিজি