জমে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন ২০২৫। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীসহ বিভিন্ন মতাদর্শের ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৪৭১ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তবে প্রার্থী বাছাইয়ে মতাদর্শ নয়;
জমে উঠেছে ডাকসু নির্বাচন ২০২৫। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে বাম, ডান ও মধ্যপন্থীসহ বিভিন্ন মতাদর্শের ১০টি প্যানেল ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে এ নির্বাচনে ৪৭১ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তবে প্রার্থী বাছাইয়ে মতাদর্শ নয়; বরং প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, দক্ষতা, সততা ও ক্যাম্পাসের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে নীতিগত অবস্থানকে গুরুত্ব দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থীরা জানান, মতাদর্শের চেয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান তাদের কাছে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ভোটাররা: উমামা ফাতেমা
‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। নির্বাচনের আয়োজনে কোনো ত্রুটি দেখতে পাচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেভাবে ত্রুটি বলা যাবে না; বরং আয়োজনে বেশকিছু অসংগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এগুলো সমাধান করলেই হবে। যেমন নির্বাচনের সময়ে অনেক বিভাগে পরীক্ষা পড়েছে। এতে ডাকসুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা। ভোটের তারিখের সঙ্গে পরীক্ষার তারিখের সমন্বয় আনতে হবে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন আবার নির্বাচনও যেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।’
নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনো দাবি আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের কনসার্ন ফলাফল ঘোষণার সময় নিয়ে। আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি যে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ফল ঘোষণায় দেরি হলে ভোটের ফল পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং ফল ঘোষণা করতে বেশি সময় নেয়া যাবে না। এছাড়া হলের কাছাকাছি কোনো জায়গায় ভোটকেন্দ্র হলে ভালো হয়। হলের কাছের কোনো একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র হলে ভালো হয়।’
প্রচারে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে উমামা বলেন, ‘বর্তমানে রাত ১০টা পর্যন্ত হলে নির্বাচনী প্রচার চালানো যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত লাইব্রেরিতে থাকে। অনেকে টিউশনে যায়। এতে প্রচারের সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং হলে নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া হলে প্রবেশ ও বের হওয়ার বিধিবিধান শিথিল করতে হবে।’ তার প্রশ্ন, যদি দৃশ্যমান প্রচার না চালানো যায়, তাহলে কীভাবে ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে প্রার্থীরা পরিচিত হবেন?
নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু প্রার্থীরা নন, আমাদের অনেক বোনও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং ও হয়রানি রোধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলেও প্রশাসন এখনো তা করেনি। ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে বিশেষ সাইবার সেল গঠন করা সময়ের দাবি।’
প্রচার চালাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাড়ার ব্যাপারে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘মেয়েদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। তারা ভোট প্রদানে অনেক বেশি আগ্রহী। প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসব-উদ্দীপনা দেখতে পাচ্ছি। এ উৎসব বিদ্যমান থাকুক। এছাড়া মত-পথ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থীর সাড়া পাচ্ছি। প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ভোটাররা।’
‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ নীতিতে সবার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে: সাদিক কায়েম
ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা সাদিক কায়েম। শিবিরসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ৫ আগস্টের পর থেকেই ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। অবশেষে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এ নির্বাচন থেকে প্রত্যাশা কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে সাদিক কায়েম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের অন্যতম একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা তাদের স্বপ্নের কথা বলছেন। তারা কেমন ক্যাম্পাস চান, সেটা বলছেন। প্রার্থীরা ক্যাম্পাসের কল্যাণে নতুন নতুন আইডিয়ার প্রতিযোগিতা করছে। আমাদের মতাদর্শিক দূরত্ব আছে, তারপরও আমরা এক টেবিলে বসব। একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ চলছে। এ পরিবেশের জন্যই শহীদরা জীবন দিয়েছেন। এ ডেমোক্রেটিক পরিবেশ এগিয়ে নেয়ার জন্য সুষ্ঠু একটি নির্বাচন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। দেশের প্রশ্নে যে আমাদের এক থাকতে হবে।’
বহুল প্রতীক্ষিত ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কমিশনের বোল্ড পজিশন দেখছি না। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই গায়েবি বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনেকেই শিক্ষক রাজনীতি করেন। শিক্ষক হিসেবে তাদের আমরা শ্রদ্ধার চোখে দেখি। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া। কিন্তু এমন যেন না হয় যে তারা নির্দিষ্ট একটি ছাত্র সংগঠনকে অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছেন। যদি তারা এটি করেন তাহলে নির্বাচনটি ছাত্র বনাম শিক্ষকের পর্যায়ে যাবে, যা দেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই শিক্ষকরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।’
শিবির একটা বিশেষ আদর্শের রাজনীতি করে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তাদের ভিন্ন রূপে দেখতে পাওয়ার বিষয়ে সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল ঘোষণা করেছি। সেই সঙ্গে আমরা “ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি”র কথা বলছি। আমাদের যারা সমালোচনা করেন, তাদেরও এ প্যানেলে রাখার চেষ্টা করেছি। এ প্যানেলে যার যে জায়গায় স্পেশালাইজেশন আছে, আমরা সেই অনুযায়ী তাদেরকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। আমরা নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এতে আমরা জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমরা ছাত্রী বোনদের ওপর অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তারা যেমন একটি নারীবান্ধব ও নারীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস চান, তেমনি তাদের আবাসন সংকট দূর করা, তাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা, তাদের হাইজিন কিট নিশ্চিত করা, ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা করা, ছাত্রীরা যেন অন্য হলে প্রবেশের অধিকার পান, এগুলো আমরা প্রস্তাবনায় রেখেছি। একই সঙ্গে যারা হ্যারাজমেন্টের শিকার হন, তাদের জন্য একটি ডিজিটাল কমপ্লেইন বক্স স্থাপন ও তা কার্যকর করার উদ্যোগ আমাদের প্রস্তাবে রয়েছে। ছাত্রীদের জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে না তোলা পর্যন্ত আমরা থামব না। এটা আমাদের কমিটমেন্ট।’
‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’ স্লোগানটির মাধ্যমে ছাত্রশিবির কী বোঝাতে চাচ্ছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমার বিভাগে সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের আশা-আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো সবার মধ্যে একটি সম্প্রীতির সম্পর্ক তৈরি করা। আমরা বিভাজনের রাজনীতিকে চিরতরে কবর দিতে চাই। আমি একজন মুসলমান; একই সঙ্গে এ দেশের একজন নাগরিক। আর খ্রিস্টান, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, রাখাই—সবাই আমরা এদেশের নাগরিক। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে চাই। এটাই আমাদের “ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি” বা “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য”।’
ছাত্রদলের ইশতেহার প্রতিশ্রুতি নয়, প্রতিজ্ঞা: আবিদুল ইসলাম খান
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। ডাকসু নির্বাচনে তার অঙ্গীকার কী, এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার প্রধানতম অঙ্গীকার হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ তৈরি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা। আমি চাই, ক্যাম্পাসে যেন ছাত্রদের কণ্ঠ দমন না হয়, বরং তারা অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ পায়। সব শিক্ষার্থী সমান। কেউ যেন কারো সুপিরিয়র হয়ে উঠতে না পারে।’
নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কোন তিনটি পদক্ষেপকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেবেন—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে অনেক সংকট বিদ্যমান। সব সমস্যার সমাধানই আমাদের কাছে প্রাধান্য পাবে। তবে এ মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বললে একাডেমিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক ফোরাম গঠন করার চেষ্টা করব। যাতে দ্রুত শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান হয়। আমরা লাইব্রেরি ও দেশ-বিদেশে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্ক উন্নয়নের চেষ্টা করব। যাতে আধুনিক গবেষণার সুযোগ নিশ্চিত হয়। এছাড়া মানবিক সহায়তা সেল গঠন করে যারা আর্থিক ও মানসিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য জরুরি সহায়তা চালু করব।’
বিভিন্ন মতাদর্শের প্রার্থীরা এবারের ডাকসুতে অংশ নিয়েছেন। ভোটের ক্ষেত্রে মতাদর্শিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর প্রভাব পড়বে না। কেননা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সচেতন। ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব এবং ইশতেহারে কী আছে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণে নিয়ে যোগ্য প্রতিনিধি বেছে নেবেন তারা।’
ছাত্রদল নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছু নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, আপনি কীভাবে তা বদলাবেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়েছে। তারাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে। আমি মনে করি, কাজের মাধ্যমেই আস্থা ফেরানো যায়। আমরা যদি দেখাতে পারি যে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে, তাহলে সেই নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন হবেই। ফ্যাসিবাদ-পরবর্তীকালে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তারা আমাদের সম্পর্কে জানতে পারছে। এতে করে এরই মধ্যে আমাদের প্রতি তাদের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হতে শুরু করেছে।’
ছাত্রদল ঘোষিত ইশতেহার সম্পর্কে জানতে চাইলে আবিদ বলেন, ‘ডাকসু হবে শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ডাকসু শুধু একটি নির্বাচনী আয়োজন নয়, এটি ছাত্রসমাজের অধিকার আদায়ের মঞ্চ। দীর্ঘ ছয় বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, আর আমরা চাই এ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হোক। আর আমরা যে ইশতেহার ঘোষণা করেছি সেটা কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, প্রতিজ্ঞা! ইশতেহার বাস্তবায়নে ছাত্রদল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের ইশতেহার মূলত ছাত্রকল্যাণ, একাডেমিক পরিবেশের উন্নয়ন এবং ক্যাম্পাসে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি বহন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি ও গবেষণা সুবিধার সীমাবদ্ধতা, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি নিরসনে ছাত্রদল নিরলসভাবে কাজ করবে। আমরা চাই ক্যাম্পাস হোক মত প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা, প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার জায়গা।’
সব শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে গেস্টরুম-গণরুমের শঙ্কামুক্ত পরিবেশ চায়: আব্দুল কাদের
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেল ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’-এর ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা শঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। তারা একটা আস্থার জায়গা চায়। নব্বইয়ে একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল, এরপর আবার যা তা-ই। চব্বিশের পর আবারো যদি সেই আগের কালচার ফিরে আসে তাহলে তাকে নিরাপত্তা দেবে কে? ফের গেস্টরুম-গণরুম প্রথা চালু হবে না তো? এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা এ শঙ্কামুক্ত পরিবেশ চায়।’
নিজের ও নিজ প্যানেলের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুরনো ব্যবস্থা ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কিত, বলেই যারা পরিবর্তনের আশায় চব্বিশের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের ওপর তারা আস্থা রাখতে চায়। স্বাভাবিকভাবেই দল-মত নির্বিশেষে সবাই একটি শঙ্কামুক্ত পরিবেশ চায়! সেক্ষেত্রে আমি ও আমার প্যানেলের সম্ভাবনা বেশি দেখছি। কেননা, আমার প্যানেলের সবাই চব্বিশের অভ্যুত্থানের অগ্রসৈনিক এবং তারা ইতিবাচক পরিবর্তন চায়।’
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে আব্দুল কাদের বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি। কে কার চেয়ে বেশি আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে পারে প্যানেল ও প্রার্থীরা যেন এ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিধি-বহির্ভূত আচরণের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করছেন। এর দ্বারা তারা বোঝাতে চাচ্ছেন, আমি তো আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি, কেউ কিছু করতে পারবে না। যেমন ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী একটি মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেন। যদিও পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। সেই ভিডিও তিনি আবার ফেসবুকে পোস্টও করেছেন।
এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলাম। তাদের উত্তর সন্তোষজনক ছিল না। শুধু তা-ই নয়, নারীদের একটি হলে ছাত্রদলের সমর্থকরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করল। এতে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালেন। শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদকে মব বলে চালিয়ে দেয়া হলো। আশ্চর্যজনকভাবে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিবাদ না করে মবের তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিল। এটা আমাদের কাছে শঙ্কার জায়গা। কেননা এর মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের একটা আশঙ্কা করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে প্রশাসন একটা গোষ্ঠীকে জিতিয়ে দিতে চাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে প্রশাসন যেসব নিয়ম প্রতিষ্ঠা করছে, তা রক্ষা করতে পারছে না। সুতরাং যদি সামনে কোনো সংকট দেখা দেয়, তাহলে তারা মোকাবেলা করতে পারবে কিনা, এমন আশঙ্কায় রয়েছি আমরা।’
আমারবাঙলা/এফএইচ