নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মিতু নামের এক নারীর সাবেক স্বামী ইউসুফ মিয়া (৪৭) ও মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার ইমির (২৪) হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন সজিব (৩২) নামের এক ব্যবসায়ী। সজিব মিতুর বর্তমান স্বামী।
সম্প্রতি ভুইগড় এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় ইউসুফ মিয়া ও ইমি সজিবের উপর চাপাতি ও চাকু নিয়ে হামলা চালিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে মাথা, চোখ, মুখ, হাত ও পা গুরুতর জখম করেন। এক পর্যায়ে সজিবের আর্ত-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইউসুফ ও ইমি পালিয়ে যান। পরে সজিবকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রো-একটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। বর্তমানে সজিব সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগায় শতাধিক সেলাই দিতে হয়েছে।
আহত সজিব সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল নয়াপাড়া এলাকার মৃত সামছুল হকের ছেলে। হামলাকারী ইউসুফ মিয়া একই থানার হাজীগঞ্জ পাঠানটুলি এলাকার মৃত ইয়াসিন চেয়ারম্যানের ছেলে। ইউসুফ মিয়া বর্তমানে ভুইগড় এলাকার সরদার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ইয়াসমিন আক্তার ইমি ইউসুফ মিয়া ও মিতুর মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে মিতু ইউসুফ মিয়াকে তালাক দেন। এরপর মিতু সজিবের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তাদের সংসারে মোহাম্মদ সাবিদ (৬) নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
মিতু জানান, তার সাবেক স্বামী ইউসুফ মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি মাদক সেবন করে তার সঙ্গে প্রায়ই খারাপ ব্যবহার করতেন। এমনকি মারধরও করতেন। মিতু এ অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ইউসুফকে তালাক দিয়ে সজিবকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে ইউসুফ বিভিন্ন সময় মিতু ও সজিবকে মেরে ফেলার জন্য কয়েবার হামলা চালান।
মিতু আরো জানান, রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে তিনি স্বামী সজিবকে নিয়ে ভূইগড় এলাকায় পিত্রালয়ে বেড়াতে আসেন। শুক্রবার সন্ধা ৭টার দিকে ইউসুফ ও ইমি মিতুর পিত্রালয়ে এসে মিতু ও তার স্বামী সজিবকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ইউসুফ তার কাছে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে সজিবের মাথায় ও শরীরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। মেয়ে ইমি চাকু দিয়ে সজিবের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। সজিব একপর্যায়ে জীবন বাচাতে আশেপাশে ছুটতে থাকেন এবং চীৎকার করতে থাকেন। পরে আশেপাশের লোকজন এসে সজিবকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রো-একটিভ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে চিকিৎসক সজিবের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন।
মিতু বলেন, হামলার ঘটনায় সজিবের পরিবার থানায় মামলা করেছে। মামলার পর ইউসুফ মিয়া ও তার মেয়ে কারাগারে আছেন।
প্রসঙ্গত, ইউসুফ মিয়া নারায়ণগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এবং জেলা কৃষক লীগের সভাপতি নাজিমুদ্দিমের মেয়ের জামাতা এবং আওয়ামী লীগ আমলে শ্বশুরের প্রভাবে একক আধিপত্য বিস্তার করে ভুইগড় রূপায়ন টাউনে ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং এলাকাবাসীকে এক প্রকার জিম্মির মুখে তিনি এই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। কেউ কোনো দিন যেকোনো বিষয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পেতেন না। কারণ তার শ্বশুর নাজিমুদ্দিন চেয়ারম্যান ছিলেন শামীম উসমানের খুবই কাছের মানুষ এবং তিনি ছিলেন জেলা কৃষক লীগের সভাপতি। সেই সুবাদে তিনি অনেক অপকর্ম করেও পার পেয়ে যেতেন। সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানান, ইউসুফ মিয়া প্রায়শই নেশাগ্রস্থ থাকেন।
হামলার ঘটনা ও সকল প্রকার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ইউসুফ মিয়ার পারিবারিক মোবাইল ফোনে কল করলে ধরেন এক নারী। তিনি ইউসুফ মিয়ার স্ত্রী বলে নিজেকে দাবি করেন। কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চাননি। পরে কল কেটে দিয়ে আবার ফোন করলে তা ধরেন আরেক নারী। তিনি নিজেকে ইউসুফ মিয়ার মেয়ে হিসেবে দাবি করেন। নাম বলেন সুরাইয়া আক্তার।
বাবা ইউসুফ মিয়া সাবেক স্ত্রীর স্বামীকে হামলা করে আহত করেছেন; এ বিষয়ে তিনি কিছু জানে কিনা প্রশ্নে সুরাইয়া বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না। কোর্টের বিষয় কোর্টে সুরাহা হবে।
ইউসুফের মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার ইমির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            