৮ ডিসেম্বর, মিরসরাই হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত অভিযানে শত্রুমুক্ত হয় পুরো মিরসরাই অঞ্চল। সকাল থেকে বেলা গড়াতেই পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়—মুক্ত হয় মিরসরাই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেদিন সকালে মুক্তিযোদ্ধা জাফর উদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বে বিএলএফ–এর প্রায় দু’শ মুক্তিযোদ্ধা মিরসরাই সদরের পূর্ব দিক ছাড়া বাকি তিন দিক ঘিরে ফেলে। বেলা ১১টার দিকে সমন্বিত আক্রমণ শুরু হলে তুমুল গুলিবিনিময় হয়। পাকবাহিনীর প্রধান অবস্থান ছিল মিরসরাই হাই স্কুল, থানা ও সি.ও. অফিসে। কিছু সময় পরই তারা অবস্থান ছেড়ে পালিয়ে যায়; মুক্তিযোদ্ধারা থানায় ঢুকে উদ্ধার করেন আটটি রাইফেল। পরে জানা যায়, সৈন্যরা চট্টগ্রামের দিকে সরে যায়—যা তখনও পুরোপুরি মুক্ত হয়নি।
মুহূর্তেই খবর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। হাজারো মানুষ জয়বাংলা স্লোগান দিতে দিতে ভিড় করেন মিরসরাই হাই স্কুল মাঠে। কোরআন তেলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা; মিরসরাইকে ঘোষিত হয় স্বাধীন এলাকা হিসেবে।
স্থানীয়ভাবে দিনটি প্রতি বছরই তাৎপর্যের সঙ্গে পালিত হলেও গত বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতির জটিলতা ও আর্থিক সংকটে বড় কোনো আয়োজন হয়নি। এ বছরও একই কারণে সীমিত পরিসরে কর্মসূচি রাখা হয়েছে।
মিরসরাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ লিয়াকত আলী বলেন, ‘বড় আয়োজনের মতো পরিস্থিতি নেই। শুধু বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘এটি জাতীয় দিবস না হলেও স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবারের উদ্যোগ থাকলে প্রশাসন সহযোগিতা করবে।’
মিরসরাইয়ের মানুষ আজও শ্রদ্ধা ও গর্ব নিয়ে স্মরণ করছে সেই মুক্তির দিনটিকে।
আমারবাঙলা/এনইউআ