লস অ্যাঞ্জেলেস এফসির বিপক্ষে বাংলাদেশ সময় গত সোমবার রাতে ২–০ গোলের জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু করেছে চেলসি। তবে জয়–পরাজয় ছাপিয়ে ম্যাচ শেষে বড় হয়ে উঠেছে ফাঁকা গ্যালারি। চেলসির জয়ের ম্যাচে মার্সিডিস–বেঞ্জ স্টেডিয়ামের ৭১ হাজার আসনের মধ্যে পূর্ণ ছিল কেবল ২২ হাজার ১৩৭ আসন।
অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজারের মতো আসন ছিল খালি। অথচ এমন নয় যে এই ম্যাচে দুটি বিদেশি দল খেলেছে। এই ম্যাচে চেলসির প্রতিপক্ষ লস অ্যাঞ্জেলেস যুক্তরাষ্ট্রেরই দল। কিন্তু তারাও মাঠে দর্শক আনতে পারেনি।
ম্যাচ শেষে ফাঁকা মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন চেলসি কোচ এনজো মারেসকা, ‘আমার মনে হয় পরিবেশ কিছুটা উদ্ভট। স্টেডিয়াম প্রায় খালিই ছিল। আমরা পেশাদার এবং আমাদের পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। যখন দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে খেলা হয়, তখনো মানিয়ে নিতে হয়। আবার দর্শক না থাকলেও মানিয়ে নিতে হয়। এগুলো কোনো বিষয় নয়।’
সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ফিফার প্রত্যাশা ছিল ২৬ হাজারের মতো দর্শক মাঠে উপস্থিত থাকবে। কিন্তু, ছোট মধ্যবর্তী একটি গ্যালারিই কেবল পূর্ণ হয়েছে। নিচের বড় গ্যালারিতে অর্ধেকের বেশি আসন খালি ছিল। সব মিলিয়ে এত কমসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি হতাশ করেছে সবাইকে।
ম্যাচের আগে সবচেয়ে কম দামের টিকিটটি পাওয়া গেছে ৩৭ পাউন্ডে। তবে খেলা চলাকালীন অনলাইনে টিকেটের দাম কমে দাঁড়ায় ২৬ পাউন্ড। কিন্তু এরপরও স্টেডিয়ামমুখী হননি দর্শকেরা।
সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাব বিশ্বকাপ দর্শকদের আগ্রহ জাগাতে পারছে কি না, তা নিয়ে বেশ আলোচনা শোনা যাচ্ছে। চেলসি ম্যাচের পর সেই আলোচনা নিশ্চিতভাবে আরো বাড়বে।
অথচ দুই বছর আগে এই মাঠে খেলে গিয়েছিল চেলসি। প্রিমিয়ার লিগ সামার সিরিজ নামে সেই প্রীতি টুর্নামেন্টের ম্যাচে চেলসির প্রতিপক্ষ ছিল নিউক্যাসল। সেই ম্যাচের টিকিট সব বিক্রি হয়েছিল আর মাঠে উপস্থিত ছিল ৭০ হাজারের বেশি দর্শক। আর এবার ফিফা টুর্নামেন্টও ম্যাচে দর্শক আনতে পারল না।
এমন পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছে তা হলো, মৌসুম শেষে দর্শকেরা কি আসলেই ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, নাকি যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের কম জনপ্রিয়তার কারণেই এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে? যদি দ্বিতীয় কারণ সত্যি হয়, তবে ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়েও নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়তে হতে পারে আয়োজকদের।
এ বিষয়টি নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন আটলান্টা জার্নাল–কনস্টিউটিশনের সাংবাদিক ডোগ রবার্সন। দর্শক উপস্থিতি কম থাকার কারণ হিসেবে ম্যাচের সময়কে সামনে এনেছেন তিনি, ‘এটা এই কারণে নয় যে এখানে মানুষ ফুটবল নিয়ে আগ্রহী নয়। দর্শক উপস্থিতি ছিল না, কারণ ম্যাচটা হয়েছে সোমবার বেলা ৩টায়। সত্যি বলতে, আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে এত লোক এসেছেন।’
ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের অনাগ্রহের কারণ হিসেবে আরও একটি বিষয়কে সামনে এনেছে রবার্সন, ‘এটা এমন একটি টুর্নামেন্ট যা যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ এটা নতুন। আমি মনে করি, এমন একটি টুর্নামেন্টে অর্থ খরচের জন্য মানুষ ততটা আগ্রহী হয়নি, কারণ আগামী বছর বিশ্বকাপ আসছে আর মানুষ সেই জন্য অর্থ জমাচ্ছে। আমি যদি ফিফা হতাম, তবে বিশ্বকাপের জন্য এমন সময় নির্ধারণ করতাম, যখন বেশি মানুষ আসতে পারে। এটা চিন্তা করার বিষয় আর টিকিটের দাম তো খুবই অযৌক্তিক ছিল।’
টুর্নামেন্ট নিয়ে প্রচারণার অভাব দেখছেন আরেক ক্রীড়া সাংবাদিক জনাথন টানেনওয়াল্ড, ‘যখন তুমি এখানে আসবে, তখন অনেক মার্কেটিং করতে হবে। এটা আশা করা যায় না যে মানুষ নিজে নিজে এসে যাবে। আমেরিকায় কোনো স্থানীয় আয়োজক কমিটি ছিল না; কারণ, ফিফা সবকিছু নিজেরা করেছে।’
নকআউট পর্বে দর্শক উপস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা নিয়ে টানেনওয়াল্ড আরো বলেন, ‘লোকেরা কি নকআউট পর্বে আসবে? হয়তো! কিন্তু যখন টিকিট খুবই দামি এবং ম্যাচ আটলান্টায়, তখন গ্রুপ পর্বে চেলসি বনাম এলএএফসি ম্যাচে তারা কি আসবে? নাহ, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বুদ্ধি তাদের আছে।’
এমন নয় যে সব ম্যাচে দর্শক কম হচ্ছে। রোজ বোলে পিএসজি ও আতলেতিকো মাদ্রিদের ম্যাচে যেমন দর্শক উপস্থিত ছিল ৮০ হাজারের মতো। ম্যাচ শেষে এলএএফসির কোচ স্টিভ চেরুন্দোলোও বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটা ম্যাচের ওপর নির্ভর করছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের রোজ বোলে পিএসজি ও অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের মধ্যকার খেলায় অনেক দর্শক হয়েছিল। হয়তো এলএ আটলান্টার চেয়ে ফুটবলকে আরো ভালোবাসে! আমি আসলে ঠিক জানি না। আমাদের আসলে সব শেষ হওয়ার পরই বিচার করা ভালো হবে।’
আমারবাঙলা/জিজি