বর্তমানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট আর কল্পনার বিষয় নয়। অনেক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপি এখন বাসাবাড়ির গ্রাহকদের জন্য ১০০ মেগাবিট থেকে শুরু করে গিগাবিট স্পিড পর্যন্ত সংযোগ দিচ্ছে। পাশাপাশি বিডিআইএক্স সংযোগ ও ক্যাশ সার্ভারের সুবিধাও যুক্ত হয়েছে, যার ফলে ইউটিউব, ফেসবুক বা গেমিংয়ের মতো জনপ্রিয় সেবাগুলো পাওয়া যাচ্ছে আরও দ্রুতগতিতে।
তবুও অনেকেই এই উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেন না। এর বড় কারণ হলো ভুল রাউটার ব্যবহার, মানসম্পন্ন কেবলের অভাব ও অপ্রতুল নেটওয়ার্ক সেটআপ।
মাত্র ৬০০-৭০০ টাকার প্যাকেজেও এখন বিডিআইএক্স ও ক্যাশ সার্ভারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, অথচ অনেকে সঠিক ডিভাইস না থাকায় এই সুবিধার পুরোটা পাচ্ছেন না। তাই উচ্চগতির ইন্টারনেট পেতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
কেবলের মান ঠিক রাখুন
বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে বাসা বা অফিসে ইন্টারনেট পৌঁছায়। এই ফাইবার সরাসরি রাউটার বা কম্পিউটারে যুক্ত করা যায় না। এজন্য ‘ওনু’ বা ‘জিপন’ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, যা থেকে ল্যান কেবলের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হয় রাউটার বা কম্পিউটারে।
অনেকেই এখনো পুরনো ক্যাট-৫ ল্যান কেবল ব্যবহার করেন, যা সর্বোচ্চ ১০০ মেগাবিট গতিতে ডেটা পাঠাতে পারে। ফলে আপনি যদি উচ্চগতির সংযোগ নিয়ে থাকেন, তবুও কেবল সীমাবদ্ধতার কারণে গতি পাবেন না।
এক্ষেত্রে অন্তত ক্যাট-৫ই বা ক্যাট-৬ কেবল ব্যবহার করা উচিত। কেবল কেনার সময় অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে সেটি ১ গিগাবিট পর্যন্ত গতি সমর্থন করে কি না। দীর্ঘ ল্যান কেবল ব্যবহার করলেও গতি কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যদি একাধিক তলায় বা দূরবর্তী ঘরে সংযোগ দেওয়া হয়।
রাউটার ঠিকমতো বেছে নিন
অনেকেই সাশ্রয়ী মূল্যে রাউটার কেনেন, কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন না এতে আসলে কতটা গতি পাওয়া সম্ভব। বেশিরভাগ কমদামি রাউটারে ইন্টারনেট ইনপুট পোর্ট থাকে মাত্র ১০০ মেগাবিট গতি সমর্থনযোগ্য, যদিও রাউটারের বক্সে লেখা থাকে ৩০০-১২০০ মেগাবিট পর্যন্ত ওয়াই-ফাই গতি।
মূলত এই গতি ওয়াইফাই এর মধ্যে ডিভাইসগুলো একে অপরের সঙ্গে কত দ্রুত ডেটা আদান-প্রদান করতে পারে—তা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, ইন্টারনেট গতি নয়। তাই রাউটার কেনার সময় অবশ্যই ল্যান এবং ওয়্যান পোর্ট গিগাবিট স্পিড সাপোর্ট করে কি না, তা দেখে কেনা উচিত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড। প্রচলিত ২.৪ গিগাহার্জ নেটওয়ার্ক শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনেক সময় ভীড়ের কারণে ধীর গতিতে চলে। এ সমস্যা এড়াতে ৫ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সির ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার বেছে নেওয়া ভালো। গিগাবিট রাউটারগুলোর বেশিরভাগেই ডুয়াল-ব্যান্ড সুবিধা থাকে।
মেশ নেটওয়ার্কের ব্যবহার
বড় বাসা বা অফিসে একক রাউটার দিয়ে পুরো জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট নিশ্চিত করা কঠিন। অনেকে এক্সটেন্ডার ব্যবহার করলেও তাতে গতি কমে যেতে পারে। এ সমস্যার কার্যকর সমাধান হলো মেশ নেটওয়ার্ক।
বাজারে পাওয়া যায় দুটি বা তিনটি রাউটার সম্বলিত মেশ প্যাকেজ, যেগুলোর সঙ্গে থাকে নির্দিষ্ট মানচিত্র বা নির্দেশিকা—কোথায় কোন ইউনিট বসানো উচিত। ঠিকমতো মেশ কনফিগার করলে পুরো ঘরেই মসৃণ এবং দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক পাওয়া সম্ভব।
ডিভাইস ও নেটওয়ার্ক সেটিংস
ডেস্কটপ কম্পিউটারে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স পেতে হলে ল্যান কেবল ব্যবহার করাই শ্রেয়। কেবল ব্যবহারে সংযোগ হয় স্থিতিশীল ও দ্রুত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কম্পিউটারের ল্যান পোর্ট বা কার্ড গিগাবিট স্পিড সমর্থন করছে কি না।
গিগাবিট রাউটার ও উপযুক্ত ক্যাবল ব্যবহারে প্রতি সেকেন্ডে ১১০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতি পাওয়া সম্ভব, তবে অবশ্যই সেটিংস থেকে নিশ্চিত হতে হবে ডিভাইসে গিগাবিট মোড সক্রিয় রয়েছে।
মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটে দ্রুতগতির জন্য চেষ্টা করতে হবে ৫ গিগাহার্জ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার। তবে মনে রাখতে হবে, এই ফ্রিকোয়েন্সির রেঞ্জ কম হওয়ায় দেয়াল বা বাধা থাকলে গতি হ্রাস পেতে পারে। ওয়াইফাই ৬ সমর্থিত রাউটার ও ডিভাইস থাকলে ৫০০ মেগাবিট পর্যন্ত গতি পাওয়া সম্ভব।
রাউটার ঠিকঠাকভাবে বসান
রাউটার যেন ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় থাকে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। এক পাশে বসালে অন্য প্রান্তে সিগন্যাল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ওয়াইফাই রেঞ্জ বাড়াতে সঠিক চ্যানেল নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
২.৪ গিগাহার্জ নেটওয়ার্কে মাত্র ১২টি চ্যানেল থাকে, যেগুলোর মধ্যে কম ব্যবহৃত চ্যানেল বেছে নেওয়া উচিত। আর ৫ গিগাহার্জ নেটওয়ার্কের চ্যানেল বেছে নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, আপনি যে ডিভাইস ব্যবহার করছেন সেটি যেন সেই চ্যানেল সমর্থন করে।
রাউটার গরম হয়ে গেলে পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে, তাই এটি বদ্ধ স্থানে না রেখে খোলামেলা জায়গায় রাখতে হবে।
সঠিক কেবল, মানসম্মত রাউটার ও ঠিকঠাক নেটওয়ার্ক সেটআপ—এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলেই বর্তমান সময়ের উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব।
আমারবাঙলা/এফএইচ