ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ইংল্যান্ড বা ভারত-কেউ জেতেনি, ম্যাচ শেষ হয়েছে ড্র–তে। তবে ফলহীন এই ম্যাচেই শেষ দিকে দেখা গেছে চরম নাটকীয়তা। দিনের খেলা এক ঘণ্টা বাকি, এমন সময় ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস মাঠে থাকা ভারতের দুই ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দরের দিকে ‘হ্যান্ডশেক’-এর জন্য হাত বাড়িয়ে দেন।
একটি টেস্ট ম্যাচের শেষ দিনের শেষবেলায় ফিল্ডিং দলের অধিনায়কের ‘হ্যান্ডশেক’ প্রস্তাবের অর্থ ড্র মেনে খেলা তখনই শেষ করে দেওয়া। সাধারণত ব্যাটসম্যান দল এ ধরনের প্রস্তাব মেনে নিলেও ভারতের দুই ব্যাটসম্যান ওই মুহূর্তে তাতে রাজি হননি।
কেন হননি, সেটা তাৎক্ষণিকভাবেই বোঝা গেছে। তবে এর রেশ থেকে গেছে ম্যাচের শেষেও। দিন শেষে দুই দলের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেই প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়েছে। খেলা চালিয়ে গেলেও জেতা যাবে না, সেটা বোঝার পরও ভারতের ব্যাটসম্যানরা কেন ব্যক্তিগত মাইলফলকের পেছনে ছুটলেন আর ইংল্যান্ড অধিনায়কই–বা কেন ঠিক ওই মুহূর্তেই খেলা শেষ করতে চাইলেন?
স্টোকস যখন জাদেজা ও সুন্দরের দিকে ড্রর জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, ম্যাচে ভারত তখন ৭৫ রানে এগিয়ে। ম্যাচে ইংল্যান্ডের একটি ইনিংস বাকি থাকায় কেউই যে জিতছে না, সেটা বোঝা যাচ্ছিল স্পষ্টতই। তবে দুই সেশন ধরে ব্যাটিং করতে থাকা দুই ব্যাটসম্যানের চোখে তখন ব্যক্তিগত সেঞ্চুরির লক্ষ্য। জাদেজা অপরাজিত ৮৯ রানে, সুন্দর ৮০ রানে। এর মধ্যে সুন্দর আবার কখনোই টেস্টে সেঞ্চুরি করেননি।
স্টোকসের বাড়িয়ে দেওয়া হাত প্রত্যাখ্যান করে ভারতের দুই ব্যাটসম্যান খেলা চালিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত করেছেন সেঞ্চুরিও। সুন্দরের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পূর্ণ হওয়ার পরই দুই দল খেলায় সমাপ্তি মেনে নেয়। ম্যাচ শেষ হয় সমতায়।
দিনের শেষে ভারত কোচ গৌতম গম্ভীরকে তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের ‘হ্যান্ডশেক’ প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেই উত্তর দিয়েছেন, ‘কেউ যদি ৯০ আর ৮৫ রানে ব্যাট করে, তাদের কি সেঞ্চুরি পাওয়া উচিত নয়? ইংল্যান্ডের কেউ যদি এ ধরনের মাইলফলকের সামনে থাকত, তারা কি খেলা ছেড়ে দিত? আমাদের ব্যাটসম্যানরা (সারা দিনে) প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলেছে, সেঞ্চুরিটা তারা অর্জন করে নিয়েছে। আমরা এখানে কাউকে খুশি করতে আসিনি।’
ভারত তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছিল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ৩১১ রান পিছিয়ে থেকে। অধিনায়ক শুবমান গিলের ১০৩ ও লোকেশ রাহুলের ৯০ রানের ইনিংসের পর জাদেজা (১০৭*) ও সুন্দরের (১০১*) ব্যাটে ভর করেই ১৪৩ ওভারে ৪২৫ রান নিয়ে ম্যাচ শেষ করে ভারত।
দিনের খেলা শেষে ভারতের ব্যাটসম্যানদের, বিশেষ করে জাদেজা-সুন্দরের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। তবে সেঞ্চুরির কাছাকাছি দুই ব্যাটসম্যানের কাছে কেন ড্রর প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে নিজস্ব একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, ‘জুটিটা অবিশ্বাস্য রকম ভালো খেলেছে। আমি মনে করি না অপরাজিত শতরান করা, দলকে একটি কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করার চেয়ে ৮০ বা ৯০ রানে অপরাজিত থেকে ফিরে আসায় বেশি সন্তুষ্টি আছে। (তবে) এটা আপনি দলের জন্যই করেছেন। জানেন তো, ওই ১০ রান বা যা-ই হোক না কেন, সত্যি হচ্ছে আপনি আপনার দলকে একটা খুব, খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে পেরেছেন এবং শেষ ম্যাচের আগেই আপনার দলকে প্রায় সিরিজ হার থেকেও বাঁচিয়েছেন।’
ভারতের দুই ব্যাটসম্যানের চেয়ে নিজেদের বোলারদের কথাই ওই সময় বেশি ভেবেছেন বলে জানান স্টোকস, ‘আমরা আমাদের মূল বোলারদের দিয়ে খেলাটা যতদূর সম্ভব টেনে নিয়ে গিয়েছিলাম, উদ্দেশ্য ছিল জেতাটা। কিন্তু যে মুহূর্তে এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে ড্র হওয়া অনিবার্য, আমি তখন আর আমাদের মূল বোলারদের নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি। বিশেষ করে আমাদের হাতে সময় কম, এই সপ্তাহজুড়ে এবং পুরো সিরিজে তাদের ওপর চাপও অনেক বেশি ছিল।’
ভারতের দুই ব্যাটসম্যান হ্যান্ডশেক প্রস্তাব না মেনে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলার পর স্টোকস হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো খণ্ডকালীন বোলারদের দিয়ে বোলিং করিয়েছেন। বিষয়টি তুলে ধরে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বলেছেন ‘হ্যারি ব্রুক ছাড়া আর কেউ বোলিং করার মতো নির্ভার অবস্থায় ছিল না। তবে তাকেও আমি সতর্ক করে দিয়েছিলাম, “দয়া করে কোনো বোকামি করো না।’’ আমরা মাঠে অনেক সময় কাটিয়েছি, এ সময় পেশিতে টান পড়া বা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ বোলিং না করে থাকলেও ক্লান্ত। তাই আমি শুধু তাকে বলেছিলাম, “শেষ পর্যন্ত ঠিকভাবে পার করো।” কিন্তু হ্যাঁ, যখন পরিণাম পরিষ্কার ছিল, তখন আমি আমাদের নিয়মিত বোলিং অপশনগুলোর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইনি।’
পাঁচ টেস্টের ‘অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি’তে ইংল্যান্ড এখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩১ জুলাই ওভালে।
আমারবাঙলা/জিজি