ঢাকায় এসে প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক নবনিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট। সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ও ভুটানের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাংকের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে।
আলোচনায় জোহানেস জুট বলেন, “আপনি ও আপনার টিম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। আর্থিক খাতে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো মোকাবিলায় আপনাদের নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে ইতিবাচক পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, বিশ্বব্যাংক তার সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “এই যাত্রায় আমরা পাশে থাকতে প্রস্তুত।”
২০২৩ সালের জুলাইয়ে আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুট বলেন, “ওটা আমাদের সবার জন্য ছিল আবেগঘন একটি অধ্যায়।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন দেশ ছিল যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত। কিন্তু আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে চলেছি। আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।”
তিনি জানান, গত বছরের গণআন্দোলনে তরুণদের অংশগ্রহণ নতুন প্রেরণা দিয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ কারণেই সরকার “জুলাই নারী দিবস” পালন করছে বলে জানান তিনি।
বৈঠকে ইউনূস আরও বলেন, “বাংলাদেশকে কেবল একটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর অগ্রগতির অংশ হিসেবে দেখা উচিত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও পরিবহন সুবিধা বাড়ানোর মাধ্যমে এই অঞ্চল আরও লাভবান হতে পারে।”
তরুণদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, “আমাদের তরুণ জনশক্তি অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে। তাই আমরা বিশ্বের উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা প্রস্তুত একটি উৎপাদন হাব গড়ে তুলতে।”
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুট বলেন, “নারী উন্নয়নে অধ্যাপক ইউনূসের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এই ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে এবং আগামীতেও এ সহায়তা বজায় থাকবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালের সাম্প্রতিক অগ্রগতি তুলে ধরেন। তাঁর ভাষ্য মতে, নতুন ব্যবস্থাপনায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়ছে এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
আমারবাঙলা/এফএইচ