কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীতীরে গড়ে ওঠা আবাসন প্রকল্পে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ৪ হাজার ৪০৯ জনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ বরাদ্দের তালিকায় স্থানীয় প্রভাবশালীর সংখ্যাই বেশি, যার অধিকাংশ তৎকালীন শাসক দলের নেতা।
সোমবার (১৪ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিবুল হাসানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তালিকা বাতিল করা হয়। এতে বলা হয়, কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে (খুরুশকুল) নির্মিত বহুতল ভবনের উপকারভোগী বাছাই, সরকারি ফ্ল্যাট হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫ অনুযায়ী এ প্রকল্পে পুনর্বাসনের জন্য ২০১১ সালে প্রণীত ৪ হাজার ৪০৯ জনের তালিকা ত্রুটিপূর্ণ, প্রশ্নবিদ্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ‘ফ্ল্যাট বরাদ্দে নানা অনিয়ম বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরকে আগেই জানিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বাঁকখালী নদীর পূর্ব-উত্তর পাড়ের খুরুশকুল এলাকায় ২৫৩ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে প্রাথমিকভাবে ৬০০ পরিবারকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো নেওয়া জলবায়ু উদ্বাস্তুদের এ আবাসন প্রকল্পে প্রকৃত উদ্বাস্তু অধিকাংশেরই ঠাঁই হয়নি। বরং রাজনৈতিক প্রভাবশালী অনেকেই প্রকল্পের ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের সময় উচ্ছেদ বাসিন্দাদের পুনর্বাসনে আবাসন প্রকল্পটি নেওয়া হয়। বসতিগুলো ছিল খুরুশকুলের পশ্চিম পাশে। এখানকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১টি মহল্লার সব ক’টিই সরকারের খাসজমি।
পুনর্বাসনের জন্য ২০১১ সালের দিকে ২১ মহল্লার ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবারকে বরাদ্দ দিয়ে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়। কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এসআইএম আকতার কামাল, জেলা প্রশাসন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথভাবে এ তালিকা প্রণয়ন করেন। ২০১৬ সালে ওই তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এ সময় বাদ দেওয়া হয় এক হাজারেরও বেশি উদ্বাস্তুকে। ফ্ল্যাট বরাদ্দ নীতিমালা অনুযায়ী, তালিকায় কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ মহল্লার হতদরিদ্র ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। অথচ অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ তালিকায় যেমন আছেন তৎকালীন সরকারি দলের লোকজন, তেমনি আছেন এখনকার বড় দলের প্রভাবশালীরাও।
ফ্ল্যাট পেয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামালের বোন মিনা বেগম ও তাঁর স্বামী খালেদ মোশাররফ। এ দম্পতি কুতুবদিয়ায় থাকেন। তারা ২১ মহল্লার বাসিন্দা নন। ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আতিক উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজ উদ্দিন, ওয়ার্ড যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী টিপু সুলতানা ও ২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মো. হানিফ। এ ছাড়া ফ্ল্যাট বরাদ্দ নিয়েছেন কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত খোরশেদ, আবু তাহের, সিরাজুল করিম ও জিল্লুল করিম। এ ছাড়া ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব শাখার সভাপতি আবুল বশর, পশ্চিম শাখার সভাপতি সাবেরের মেয়ে তানিয়া।
ফ্ল্যাট বরাদ্দ নেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার আলম ও জেলা যুবদলের তৎকালীন আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক দিদারুল ইসলাম। এ ছাড়া তালিকায় স্বামী-স্ত্রী দু’জনের নামেই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আমারবাঙলা/জিজি