ভোটের আগে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনি জোট গঠন করতে চায় জামায়াত। দলটির নেতারা বলছেন, দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে, ভোটের আগ মুহূর্তে আত্মপ্রকাশ করবে। অন্যদিকে, অতীতের মতো এবারো নিজেদের জোটে জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি।
গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে সরব কোণঠাসায় থাকা জামায়াত। বিএনপির সঙ্গে মিত্রতা ভুলে আলাদা জোট করে ভোটের চিন্তা করছে তারা। ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনি মোর্চা থেরির চেষ্টা। সাম্প্রতিক সভা-সমাবেশে মিলেছে এর আভাস।
চরমোনাই পীরের মধ্যাহ্নভোজে জামায়াত আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণও ছিল আলোচনায়। রাজনীতির মাঠে আলোচনার কেন্দ্রে এখন ইসলামিক জোট গঠনের প্রসঙ্গ।
ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, ‘শুধু ইসলামিক দলগুলো নয়, ইসলামের কল্যাণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য, দেশের কল্যাণের জন্য অন্য কোনো দলও যদি ঐক্য করে বা ঐক্যের আশা পোষণ করে আমরা তাদের সাথেও ঐক্য করতে চাই। কমপক্ষে যদি একটা আসন ভিত্তিক ঐক্য হয় তাহলে আমরা অনেকদূর এগিয়ে যাবো।’ জামায়াত নেতারা বলছেন, ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে থাকা মতবিরোধ নগণ্য বিষয়ে, সেসব নিয়ে কাজ করছেন তারা।
জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘ভিন্ন মত প্রকাশ মানেই এটি নয় যে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। সেখানে দলীয় স্বার্থের বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে। আর নির্বাচনীয় ঐক্য যদি বলেন, তাহলে সেটা এখন বলছি না কি হবে। এটার বলার এখনও সময় আসেনি। সময় এলে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ করবো।’
এই উদ্যোগকে বিএনপি নেতারা স্বাগত জানালেও, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে যাওয়ার আশা তাদেরও।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এক সাথে (জামায়াতের সাথে) নির্বাচন করেছি, আন্দোলন করেছি, এখনও আমরা এক সাথে আন্দোলনে আছি। এখন বাকি সময়টুকু আমরা অপেক্ষা করব যে, যদি জামায়াতে ইসলামী আমাদের সাথে আন্তরিকভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাহলে হয় নির্বাচনের সময়ও একটা ব্যবস্থা থাকতে পারে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, ‘এখানে আমাদের ইঙ্গিত দেওয়া আছে। এখন নির্ভর করবে জামায়াতে ইসলামির ওপরে।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জামায়াত যেকোনো সময় নিজেদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে পারে বলেও জানান বিএনপি নেতারা।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। সেই ফ্যাসিস্টদের আশ্রয় বাংলার মাটিতে হবে না। সব হত্যার বিচার চাই। মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।’
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে কুড়িগ্রামের সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন ‘১৯৭২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যারা লুটপাট করেছে, ইজ্জতে হাত দিয়েছে, এই দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা করে প্রকাশ করে দেয়া হোক। আমি অপরাধী হলে আমার নামও প্রকাশ করা হোক। বাংলাদেশের মানুষ জানুক এরা কারা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যত জায়গায় অমুসলিম ভাইদের ঘর-বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগে আওয়ামী লীগ জড়িত ছিল। কিন্তু সবার আগে নাম আসে জামায়াতের। আমরা আল্লাহকে ভয় করি। যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের হাতে মানুষের জীবন সম্পদ এবং ইজ্জত সম্পূর্ণ নিরাপদ। তার প্রমাণ বর্তমান বাংলাদেশ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়ন কাজ করা হবে, সত্যের পথে দেশ গড়ার জন্য জামায়াতের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলেছিল, কোনো দিন যদি তাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়, তাহলে তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে আমরা খুন করবো। তাদের নেতৃবৃন্দের দফায় দফায় মিথ্যাচার বাস্তবায়িত হয়নি। ৫ লাখ মানুষ মারা যায়নি। এ দেশের মানুষ দেশকে ভালোবেসে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। খুনিদের মুখে দিয়েছে চুনকালি। তারপর বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকজনকে উসকানি দিলেও তারা সে উসকানি ওদের মুখের ওপর ছুড়ে দিয়েছে।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু কার ইঙ্গিতে এটা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে এটা হয় নাই।’
কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ী যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজে অনাচার ও চাঁদাবাজি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা মুখ বন্ধ করে থাকবো না। এই জন্য আমরা রাজনৈতিক করি। সব দল ও ধর্মের লোকজন মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ক্ষমতায় গেলে সমতার ভিত্তিতে সব জেলার উন্নয়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
এ সময় কেন্দ্রীয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার সালেহীন, কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক আমীর আজিজুর রহমান স্বপন, জেলা জামায়াতের আমির মো. আব্দুল মতিন ফারুকী উপস্থিত ছিলেন। কর্মী সভায় জেলার ৯ উপজেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            