সংগৃহীত
সারাদেশ

হাতপাখা বদলে দিয়েছে রংপুরের অনেক নারীর জীবন

রংপুর ব্যুরো

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ফকিরটারী গ্রামের দুই নারী রুজিনা বেগম ও সেলিনা বেগম। হাতপাখা তৈরির মাধ্যমে তারা জীবনকে বদলে দিয়েছেন। রোজ ঘুম থেকে উঠে এখন আর তাদের খাবারের চিন্তায় অস্থির হতে হয় না। একটু স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার উপায়টুকু তারা পেয়ে গেছেন।

রুজিনা ও সেলিনা ঘরে বসে হাতপাখা তৈরি করে এখন সংসারে বাড়তি আয়ের জোগান দিচ্ছেন। হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলে ভরেছেন উঠানও।

শুধু রুজিনা ও সেলিনা নন, পীরগাছার কালীগঞ্জ, ফকিরটারী, কানদেব, গঙ্গানারায়ণ, নওয়াপাড়া, হাড়িয়াপাড়া গ্রামের তিন শতাধিক নারী ঘরগৃহস্থের কাজ শেষে হাতপাখা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। অনেকের স্বামী–সন্তান সেই হাতপাখা বিক্রির ব্যবসা করছেন। খড়ের ঘরের জায়গায় তুলেছেন টিনের ঘর, গড়েছেন গরু-ছাগলের খামার, সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

ফকিরটারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা উলের সুতা দিয়ে বাঁশের বেড়ে পাখা তৈরি করছেন। কেউ রান্নার চুলার পাশে, কেউ ঘরে উঠানে দল বেঁধে গল্পে মেতে। পুরুষেরা বাঁশ কেটে পাখার জন্য গোল বেড় তৈরিতে ব্যস্ত।

কথা হয় ওই গ্রামের গৃহবধূ তহমিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, ২০ বছর ধরে হাতপাখা তৈরি করছেন তিনি। পরিবারের সবাই এখন হাতপাখা তৈরির কাজ করেন। স্বামী হাফিজার রহমান আগে দিনমজুরের কাজ করলেও এখন হাতপাখার ব্যবসায়ী। তহমিনার তৈরি হাতপাখা গ্রীষ্মকালে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফেরি করে বিক্রি করে স্বামী। এতে বেশ লাভ হয়।

কানদেব গ্রামের সাবানা বেগমের সংসারে অভাব লেগেই থাকত। ঝগড়াঝাঁটি ছিল নিত্যসঙ্গী। সেগুলোর ছিটেফোঁটাও এখন সংসারে নেই। স্বামী সাহেব আলী ও তার আয়ে এখন বেশ সুখের সংসার।

সাবানা বেগম বলেন, আগে খুব অভাব ছিল। দুই বেলা ভাত খাবার পারি নাই। এখন সুতা দিয়া হাতপাখা বানাই। হাতপাখা বিক্রির টাকায় স্বামীক অটোক কিনে দিয়েছি। এখন হামার দুধে–ভাতে দিন যায়ছে। ভালো কাপড় পরুছি। ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়াইছ।

নওয়াপাড়া গ্রামের লাভলী বেগমের বিয়ে হয় ১৫ বছর বয়সে। আগে দিনমজুর স্বামীর আয়ে সংসার চলত না। ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রায় উপোস থাকতে হতো। এখন পাখা তৈরির আয়ের টাকায় সংসার চলছে। স্বামী আয়ের টাকা সঞ্চয় করছেন। গাভি কিনেছেন, আছে চারটি ছাগল। খড়ের ঘরের বদলে তুলেছেন টিনের ঘর।

কালীগঞ্জ গ্রামের গৃহিণী সিদ্দিকা বেগম বলেন, হাতপাখা তৈরির কাজে বেশি শ্রম দিতে হয় না। সময় বেশি লাগে না। যেকোনো কাজের ফাঁকে এটি করা যায়। পাখা বানানোর আগে সংসারে অভাব ছিল। এখন তিন বেলা পেট ভরে খাবার জুটছে।

ওই গ্রামের হাতপাখা ব্যবসায়ী হাফিজার রহমান জানান, প্রতিবছর গ্রামগুলোর কয়েক লাখ হাতপাখা বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা তাদের সঙ্গে যোগযোগ করে এসব পাখা কিনে নেন। ১০ টাকা পাখা বিক্রির ব্যবসা শুরু করলেও এখন ৪৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত প্রকারভেদে পাখা বিক্রি হয়।

ওই গ্রামের পাখা তৈরির কারিগর জেসমিন বেগম বলেন, এক দিনে ২০টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করার পারি। চৈত্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পাখার বেচাকেনা ভালো হয়। গ্রামের কেউ এখন বসি নাই। সবাই পাখা তৈরি করি টাকা কামাই। একটা পাখা তৈরি করতে ২০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৪০-৪৫ টাকায়।

হাড়িয়াপাড়া গ্রামের পাখা তৈরির আরেক কারিগর রুমি বেগম বলেন, ফুল পাখা, করমোর পাখা, শাল গাঁথুনি, ধারই গাঁথুনি, বিস্কুট গাঁথুনি, পানাষী গাঁথুনিসহ নানান রঙের পাখা তৈরি করা হয়। পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্রকার রঙিন সুতা। ঢাকা, সান্তাহার, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে এ সুতা কিনে আনা হয়। এরপর সেগুলো বাড়িতে নিয়ে এসে ভালোভাবে গুছিয়ে পাখা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাঁশের চিকন (বাতার) গোলাকার একটি ফ্রেমে লোহার শলাকার সাহায্যে সুতা দিয়ে ফ্রেমের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সুতা বুননের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এই নজরকাড়া রঙিন পাখা। প্রতি কেজি সুতা দিয়ে ৩০টি পাখা তৈরি করা যায়। একটি পাখা প্রকারভেদে ৪৫-৭০ টাকা বিক্রি হয়।

ইটাকুমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল বাসার বলেন, শুধু ফকিরটারীর নারীরাই নন; কালীগঞ্জ, হাড়িয়াপাড়া, কানদেব, গঙ্গানারায়ণ, নওয়াপাড়ার নারীরাও হাতপাখা তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। হাতপাখা তৈরি করে সংসারে বাড়তি আয় করায় তাদের গুরুত্ব বেড়েছে। আগের মতো এলাকায় ঝগড়া–ঝামেলাও এখন নেই। তবে নারীদের উন্নত প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দিতে পারলে এখানকার পাখা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যাবে।

আমারবাঙলা/এমআরইউ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

একদিনের ব্যবধানে আবারোও বাড়লো সোনার দাম

দেশের বাজারে এক দিনের ব্যবধানে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ভরিতে ৮ হাজার ৯০০ টাকা...

‘হ্যাঁ’ ‘না’ পোস্টে সরগরম ফেসবুক 

সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় চলছে ‘হ্যাঁ’ ‘না&rsqu...

হামাসের নিরস্ত্রীকরণ প্রশ্নে প্রায় ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ঘোরবিরোধী

হামাস নিরস্ত্র হোক, চান না ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বেশির ভাগ ফিলিস্তিনি...

আগামী জাতীয় নির্বাচনে এআই অপপ্রচার মোকাবিলাই বড় চ্যালেঞ্জ 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আসন্ন জাতীয় নি...

ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপে ইতিহাস দক্ষিণ আফ্রিকার

আক্ষেপ ঘুচল দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের। প্রথমবারের মতো নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফা...

একদিনের ব্যবধানে আবারোও বাড়লো সোনার দাম

দেশের বাজারে এক দিনের ব্যবধানে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ভরিতে ৮ হাজার ৯০০ টাকা...

ইসির প্রতীক তালিকায় যুক্ত হলো ‘শাপলা কলি’

সংরক্ষিত নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) ‘শাপলা কলি&rsq...

কমিটি বাতিলের দাবিতে ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত নেতাকর...

নরসিংদী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতে হামলা

নরসিংদীতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।...

বিএনপি বিবাহে রাজি হয়েছে, কাবিননামায় সাইনও করেছে; 'না' বলার অপশন নাই: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, "...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা