রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা মহিনের পরিকল্পনায় নয়, পলাতক আসামি সারওয়ার হোসেন টিটুর পরিকল্পনায় হয়েছে বলে দাবি করেছেন মহিন। তার দাবি, টিটুর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে ব্যবসা নিয়ে সোহাগের দ্বন্দ্ব চলছিল। সোহাগের সঙ্গে মহিনের কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল না। টিটুর হয়েই সবাই সোহাগের ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায়।
রবিবার (২১ জুলাই) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দিতে মহিন বলেন, ঘটনার দিন সোহাগকে হুমকি দিতে গিয়েছিলেন টিটু, মহিনসহ বাকিরা। তখন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সোহাগ। একপর্যায়ে টিটু, মহিন, টিটন গাজী, আলমগীর, লম্বা মনির, অ্যাম্বুলেন্স চালক সজীব ব্যাপারীসহ বাকিরা সোহাগকে মারধর শুরু করে। সোহাগের সঙ্গে কোনোরকম ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না বলেই দাবি মহিনের।
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের বিষয়ে মহিন বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে সোহাগ এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। অন্যদিকে টিটন ও আমি বিগত সরকারের আমল থেকেই বঞ্চিত। বিভিন্ন সময় সোহাগ তাদের আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে মারধরও করেছে। সরকার পরিবর্তনের পর মহিন, টিটন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। ব্যবসা ছাড়ার জন্য সোহাগকে বিভিন্ন সময় চাপ দিতে থাকে। ঘটনার দিনও তারা ব্যবসা ছাড়ার জন্য হুমকি দিতে যায় সোহাগকে। পরবর্তীতে সোহাগও ক্ষিপ্ত হয়। এরপরই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
পাথর দিয়ে আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যার কারণ হিসাবে মহিন বলেন, এই হত্যাকাণ্ডে যারা অংশ নিয়েছে এবং পাথর দিয়ে আঘাত করেছে-তারা সবাই সোহাগের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। বিগত সময়ে সোহাগ প্রত্যেককে বিভিন্ন সময় হয়রানি ও মারধর করেছে। সেই জমানো ক্ষোভ থেকেই সোহাগের ওপর এই নৃশংসতা চালানো হয়।
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টিটন ও মহিনের সঙ্গে সোহাগের দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। যার কারণে পূর্ববিরোধের জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সোহাগকে হত্যা করা হয়।
এ মামলার দুই নম্বর আসামি সারোয়ার হোসেন টিটু এখনো পলাতক। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার ৯ আসামির মধ্যে পাঁচজন আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি মহিন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ১০ জুলাই প্রথম দফায় ৫ দিন ও ১৫ জুলাই দ্বিতীয় দফায় মহিনের আরও ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন-মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটন গাজী, মো. আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, তারেক রহমান রবিন, সজীব ব্যাপারী, মো. রাজিব ব্যাপারী, নান্নু কাজী, রিজওয়ান উদ্দীন ওরফে অভিজিৎ বসু। এদের মধ্যে ১৭ জুলাই লম্বা মনির, আলমগীর ও টিটন এবং ১৯ জুলাই আসামি সজীব ব্যাপারী আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এছাড়া রিমান্ড শেষে রাজিব কারাগারে আটক রয়েছে।
আমারবাঙলা/জিজি
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            