সংগৃহীত
ফিচার

সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিন আজ

আমার বাঙলা ডেস্ক

রাজা রামমোহন রায় (২২ মে ১৭৭২ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৮৩৩) একজন ভারতীয় সমাজ সংস্কারক। তিনি ১৮২৮ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের একটি সামাজিক-ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ব্রাহ্মসভার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। রাজনীতি, জনপ্রশাসন, শিক্ষা ও ধর্মের ক্ষেত্রে তার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। তিনি সতীদাহ প্রথা এবং বাল্যবিবাহ বাতিলের প্রচেষ্টার জন্য পরিচিত ছিলেন। অনেক ইতিহাসবিদ রামমোহন রায় কে "ভারতীয় রেনেসাঁর জনক" বলে মনে করেন।

২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জরিপে রামমোহন ১০ম স্থানে ছিলেন।

১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে রামমোহন রায়ের জন্ম হয়েছিল। তার পিতা রামকান্ত ছিলেন একজন বৈষ্ণব, তার মা ফুলঠাকুরানী দেবী ছিলেন শৈব পরিবারের। তিনি সংস্কৃত, ফার্সি এবং ইংরেজি ভাষার একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন এবং আরবি, ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষাও জানতেন।

পনেরো-ষোলো বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে নানা স্থান ভ্রমণ করেন। কাশীতে ও পাটনায় কিছুকাল অবস্থান করেন। এছাড়া তিনি নেপালে গিয়েছিলেন। এর আগে তার সঙ্গে তন্ত্রশাস্ত্রবেত্তা সুপণ্ডিত নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কারের (পরে হরিহরানন্দ তীর্থস্বামী কুলাবধূত নামে পরিচিত) যোগাযোগ হয়। নন্দকুমারের সহযোগিতায় রামমোহনের সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য হয়, তার বেদান্তে অনুরাগ জন্মে। ব্রাহ্ম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় হরিহরানন্দই তার দক্ষিণ-হস্ত ছিলেন। বারাণসী থেকে সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার পর তিনি পাটনা থেকে আরবি ও ফারসি ভাষা শেখেন। পরে তিনি ইংরেজি, গ্রিক ও হিব্রু ভাষাও শেখেন।

তরুণ বয়সে তিনি কলকাতায় মহাজনের কাজ করতেন। ১৭৯৬ সালে রামমোহন অর্থোপার্জন শুরু করেন। ১৮০৩ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। কলকাতায় প্রায়ই আসতেন এবং কোম্পানির নবাগত অসামরিক কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাদের নানা বিষয়ে সাহায্য করতেন। এই সুযোগে ভালো করে ইংরেজি শিখে নেন।

১৮১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রামমোহন কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা হন, তখন থেকেই প্রকাশ্যে তার সংস্কার-প্রচেষ্টার শুরু। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসি ভাষায় লেখা তুহফাতুল মুহাহহিদিন। বইটিতে একেশ্বরবাদের সমর্থন আছে। এরপর একেশ্বরবাদ (বা ব্রহ্মবাদ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য বেদান্ত-সূত্র ও তার সমর্থক উপনিষদগুলি বাংলায় অনুবাদ করে প্রচার করতে থাকেন। ১৮১৫ থেকে ১৮১৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয় বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। রক্ষণশীল ব্যক্তিরা তার এ কাজের প্রতিবাদ করেন। 'বেদান্ত গ্রন্থ' প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখালেন আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নাম ও রূপ দেন। সাহেবদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে ব্যাকরণ রচনা করেন।

বেদান্ত-উপনিষদগুলি বের করবার সময়ই তিনি সতীদাহ অশাস্ত্রীয় এবং নীতিবিগর্হিত প্রমাণ করে পুস্তিকা লিখলেন 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ'। প্রতিবাদে পুস্তিকা বের হল 'বিধায়ক নিষেধকের সম্বাদ'। তার প্রতিবাদে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুস্তিকা বের হয়। এই বছরেই ডিসেম্বর মাসে আইন করে সহমরণ-রীতি নিষিদ্ধ করা হয়। তবুও গোঁড়ারা চেষ্টা করতে লাগল যাতে পার্লামেন্টে বিষয়টি পুনর্বিবেচিত হয়। এই চেষ্টায় বাধা দেওয়ার জন্য রামমোহন বিলেত যেতে প্রস্তুত হলেন। এ ব্যাপারে তাকে আর্থিক সহায়তা দান করেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। মোঘল সম্রাট ২য় আকবর তার দাবি ব্রিটিশ সরকারের কাছে পেশ করার জন্য ১৮৩০ সালে রামমোহনকে বিলেত পাঠান, তিনি রামমোহনকে রাজা উপাধি দেন।

বেদান্তচন্দ্রিকার প্রতিবাদে রামমোহন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বিচার লিখে প্রতিবাদীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বেদান্ত গ্রন্থ প্রকাশের সঙ্গে তিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ একেশ্বর উপাসনার পথ দেখান আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করে। এই আত্মীয় সভাকেই পরে তিনি ব্রাহ্মসমাজ নামে নতুন রূপ দেন।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। দিল্লির বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর তাকে 'রাজা' উপাধি দেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন আধুনিক ভারতের সমাজ সংস্কারের অন্যতম পথিকৃৎ।

রামমোহন রায় সামাজিক কুফলগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এবং ভারতে সামাজিক ও শিক্ষাগত সংস্কার প্রচারের জন্য আত্মীয় সভা এবং একতাবাদী সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৮২৮ সালে, তিনি ব্রাহ্ম সভা স্থাপন করেন, সামাজিক মন্দের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সংস্কারবাদী বাঙালি ব্রাহ্মণদের একটি আন্দোলন।

রামমোহন রায় বিশ্বাস করতেন শিক্ষা সমাজ সংস্কারের একটি বাস্তবসম্মত হাতিয়ার। ১৮১৭ সালে, ডেভিড হেয়ারের সহযোগিতায় তিনি কলকাতায় হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন। ১৮২২ সালে অ্যাংলো-হিন্দু স্কুলের চার বছর পরে (১৮২৬) বেদান্ত কলেজে; তিনি জোর দিয়েছিলেন যে তার একেশ্বরবাদী মতবাদের শিক্ষাগুলি "আধুনিক, পাশ্চাত্য পাঠ্যক্রম" এর সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ১৮৩০ সালে, তিনি রেভারেন্ড আলেকজান্ডার ডাফকে সাধারণ পরিষদের ইনস্টিটিউশন (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত) প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন। তিনি ভারতীয় শিক্ষায় পাশ্চাত্য শিক্ষার অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করেন। তিনি পাশ্চাত্য ও ভারতীয় শিক্ষার সংশ্লেষণ হিসেবে কোর্স অফার করে বেদান্ত কলেজও স্থাপন করেন।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা ছিল সংবাদ কৌমুদী। এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ভারতীয়দের চাকরির উচ্চ পদে অন্তর্ভুক্ত করা এবং নির্বাহী ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের মতো বিষয়গুলিকে কভার করে।

ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন সংবাদমাধ্যমে মুখ থুবড়ে পড়ে, তখন রাম মোহন যথাক্রমে ১৮২৯ এবং ১৮৩০ সালে এর বিরুদ্ধে দুটি স্মারক রচনা করেন।

১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছান। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। সেখানে ফরাসি সম্রাট লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সংবর্ধিত হন। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৮ দিন জ্বরে ভুগে ২৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যবরণ করেন। তার মৃত্যুর দশ বৎসর পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 'আনসার ডেল' নামক স্থানে তার সমাধিস্থ করে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য ব্রিস্টলে তার একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া

আমারবাঙলা/ইউকে

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

রসুন ক্ষেতে মুরগি যাওয়াকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ায় চাচাতো ভাইয়ের হাতে খুন

কুষ্টিয়ায় রসুন ক্ষেতে মুরগি ঢোকাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধের জেরে হাফিজুল...

কুষ্টিয়া ও দৌলতপুর সীমান্তে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকার মাদকসহ অবৈধ মালামাল জব্দ

কুষ্টিয়ায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মাদক ও চোরাচালানবিরোধী অভিযানে বি...

নিরাপত্তার শঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন নারায়ণগঞ্জ প্রার্থী

নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন নার...

মহান বিজয় দিবসে শহিদদের প্রতি জেলা পুলিশের শ্রদ্ধা

আজ ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূ...

কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২ পুলিশ সদস্য নিহত

কুষ্টিয়ায় ছবি তুলতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পাবনা জেলায় কর্মরত ডিএসবি’র ইন্স...

৫২ বিজিবির অভিযানে ট্রাকসহ সোয়া কোটি টাকার ভারতীয় জিরা আটক

মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়ন (৫২ বিজিবি)-এর একটি বিশেষ ট...

১১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দিল চসিক

বীর মুক্তিযোদ্ধারাই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে মন্তব্য করেছেন সিটি কর্প...

চট্টগ্রামে মাদক ও ছিনতাই চক্রের সাত সদস্য গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের একটি দল অভি...

চট্টগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সংবর্ধনা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রামের উদ্যোগে আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্...

মহান বিজয় দিবসে বান্দরবান পুলিশের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা

১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস–২০২৫ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে বান্দরবান পার্...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা