হেডিংলিতে ওপেনারদের জন্য জীবন কখনোই সহজ ছিল না। সেখানে অনুষ্ঠিত ৮১টি টেস্টের ইতিহাস বলছে, বিদেশি ওপেনারদের গড় মাত্র ২৯.৬। এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের জন্য সেই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন-সর্বশেষ ২০ ম্যাচে এখানে তাদের গড় ২৩.৩।
সেঞ্চুরি নেই। সেই ইতিহাস কাল নতুন করে লিখেছেন ভারতীয় ওপেনার যশস্বী জয়সোয়াল। করেছেন সেঞ্চুরি, সেটি আবার দুই হাতে ‘ক্র্যাম্প’ (মাংসপেশিতে টান) নিয়ে।
এশিয়ার যেসব ওপেনার এখানে খেলে সেঞ্চুরি পাননি, তাঁদের দু-একজনের নাম আগে শুনুন-সুনীল গাভাস্কার, সাঈদ আনোয়ার, বীরেন্দর শেবাগ। মাহাত্ম্যটা বুঝতে পারছেন তো! হেডিংলিতে কাল প্রথম দিনের চ্যালেঞ্জও বেশি ছিল।
স্কাই স্পোর্টসের পরিসংখ্যানবিদ বেনেডিক্ট বারম্যানজে জানিয়েছেন, ম্যাচের প্রথম ২৫ ওভারে নতুন বলে ইংল্যান্ডে হওয়া টেস্টে ৭৫ শতাংশ টেস্টের চেয়ে বেশি সুইং পেয়েছেন ইংলিশ পেসাররা। আর ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসও নিশ্চয়ই উইকেটে কিছু না কিছুই দেখেই ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
তাই জয়সোয়ালকেও কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১১ রানের ব্রাইডন কার্সের বলে বল আকাশে তুলে দিয়েছিলেন। ১৯ রানে ক্রিস ওকসের বলে পরাস্ত হয়েছেন, এমনকি একটি শর্ট বল এসে লাগে তাঁর পাঁজরে। এসবের মধ্যেও ওকস বা জশ টাং একটু ফুললেংথে বোলিং করলেই চার আদায় করে নিয়েছেন জয়সোয়াল।
জয়সোয়াল তাঁর ইনিংসে প্রথম ৫০ রান করতে খেলেছেন ৯৬ বল-মানে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে খেলেছেন। বলটি একটু পুরোনো হলেই গতি বাড়িয়েছেন। এসব করেছেন ক্র্যাম্প নিয়ে, মাঠেই বারবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও ছন্দ হারাননি।
চা–বিরতির আগে যখন স্কোর ৯১, তখন কার্সকে পয়েন্ট দিয়ে চার মারলেন। পরের বলে কাভারে আরেকটি চমৎকার ড্রাইভ-৯৯! এরপর সিঙ্গেল তুলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, খুললেন হেলমেট, দৌড়ে করলেন উদ্যাপন! বলে রাখা ভালো, ১০১ রানের ইনিংসের মধ্যে ৯০ রানই করেছেন অফ সাইডে।
হাতে ক্র্যাম্প নিয়ে সেঞ্চুরি করা এই ক্রিকেটার দিন শেষে নিজেকে প্রমাণের তাড়নার কথা বলেছেন। মুখে হাসি নিয়ে জয়সোয়াল বলেছেন, ‘দুই হাতেই ক্র্যাম্প হয়েছিল। তবে নিজের কাজটা করেছি। প্রতিনিয়ত নিজেকে নিয়ে কাজ করি, যেন মাঠে নিজের সেরাটা দিতে পারি।’
জয়সোয়ালের টেস্ট ক্যারিয়ারের বয়স ২০ ম্যাচ। এরই মধ্যে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। আছে ডাবল সেঞ্চুরিও। আবার এই জয়সোয়ালেরই আইপিএলে ১৩ বলে ফিফটি আছে।
কীভাবে এত কিছু পারেন, শুনুন তাঁর ছোটবেলার কোচ জওয়ালা সিংয়ের মুখে, ‘ও জানে কখন কী করতে হবে। ইনিংসের গিয়ার বদলাতে পারে, শরীরের কাছ দিয়ে খেলতে পারে, আবার বাইরের বলেও সহজে হাত চালিয়ে খেলতে পারে। ছক্কা মারতে পারে, আবার পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে বদলে ফেলতেও পারে।’
আমারবাঙলা/জিজি