স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে বসেন বিক্ষুব্ধরা । ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় আহত ব্যক্তিদের দেখতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি সবার সঙ্গে দেখা করেননি অভিযোগ তুলে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তার পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। নিটোর পঙ্গু হাসপাতাল নামেই সমধিক পরিচিত।

হাত, পা, চোখে ব্যান্ডেজসহ এই ব্যক্তিরা হুইলচেয়ারে করে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। তারা জানান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তাদের সবার সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না। এ ছাড়া ঘোষণার পরও এখনো আহত ব্যক্তিদের এক লাখ টাকা করে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর নিতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি আহত কয়েকজনের খোঁজ-খবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আড়াই ঘণ্টা পর বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ততক্ষণে সেখানে আহত ব্যক্তিরা ভিড় করেন। তাদের সরে যেতে বললে আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে পথ আটকে দাঁড়ান। কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে দু-একজনকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপরে উঠতে দেখা যায়। তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভও করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অন্য একটি গাড়িতে চড়ে চলে যান। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে হাসপাতালে আসা বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকও এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। পরে তিনিও অন্য একটি গাড়িতে হাসপাতাল থেকে চলে যান।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিরাপদে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। তার গাড়িটি অক্ষত আছে।
হাসপাতালটিতে আন্দোলনে আহত ৮৪ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাধীন এই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরাও সেখানে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

একপর্যায়ে সেনা সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে হাসপাতালে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। তখন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ারে বসে আহত মোহাম্মদ মাসুম বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে আমাদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের চতুর্থ তলায় গেলেও আমাদের দেখতে তিনতলায় যাননি। তিন মাস পর হাসপাতালে এলেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদেও উপেক্ষা করেছেন।

মাসুম বলেন, ‘আমাদের রক্তের উপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশিরভাগই তা হাতে পাননি।’
আহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের এক একটি ওয়ার্ডে ৪৮ জন করে মানুষ আছে। কিন্তু তারা পছন্দের বিদেশি পাঁচজন সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশীয় কোনো সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলেও আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরেও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদেরকে অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক।
খায়রুল নামে একজন বলেন, আমাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আল মিরাজ নামের এক ছাত্র জানান, তার ডান চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে তার চিকিৎসা নেই। তাই তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান। মিরাজ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে এলেও তিনি চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে যাননি।

সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের অনুরোধে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার। এ সময় ভিড়ের মধ্যে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ করে একদল মানুষ অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও হাইকমিশনারসহ সবাই তাদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথা শোনেননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াই চলে আসতে বাধ্য হন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান করছিলেন।

আমার বাঙলা/ এসএ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এমিতে ‘অ্যাডোলেন্স’-এর জয়জয়াকার

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘোষণা করা হলো ৭৭তম এমি অ্যাওয়ার্ডস।...

রাকসু নির্বাচনে কার কী প্যানেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনের এ পর্যন্ত নয়টি প্...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে তিস্তার পানি

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আব...

বাংলাদেশ স্কাউটস্ এ সংস্কারের আড়ালে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজের দায় কার?

গত ১১ তারিখে বাংলাদেশ স্কাউটস এর বর্তমান এডহক কমিটির আহবায়ক ও সদস্য সচিবকে য...

গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের একটি স্...

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল করতে সরকারি হাসপাতালগুলোকে নতুন নির্দেশনা...

ক্রীড়া পরিদপ্তরে দুদকের অভিযান

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্রীড়া পরিদপ্তরের বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি প...

এক লাফে ট্যারিফ বাড়ল গড়ে ৪০ শতাংশ

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা