বিশ্বখ্যাত ইসলামি বক্তা ড. জাকির নায়েক চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে সফর নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ জানিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও। তবে এসব উদ্বেগ-বিতর্ক কাটিয়ে তিনি ঢাকা ও পিরোজপুরে সফর সম্পন্ন করবেন বলে একপ্রকার নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা ও পিরোজপুরে জাকির নায়েকের সমাবেশ আয়োজনের জন্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার অনুসারীদের কাছে এটি একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’, কারণ এটি হবে তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। তবে সুফি মতাদর্শের অনুসারী বেশি থাকার কারণে চট্টগ্রাম ও ভারত সীমান্তঘেঁষা সিলেটে প্রস্তাবিত অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ঢাকা ও পিরোজপুর অঞ্চলে সুফিবাদ ও মাজারকেন্দ্রিক ধর্মীয় অনুসারী তুলনামূলকভাবে কম, তাই জাকির নায়েকের মতাদর্শ নিয়ে সেখানে ধর্মতাত্ত্বিক সংঘাতের আশঙ্কা কম।
এদিকে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারতে। তাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো এবং তার সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ৩০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, জাকির নায়েক ভারতের পলাতক আসামি। আমরা আশা করি, তিনি যেখানে যাবেন— সংশ্লিষ্ট দেশ আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনায় রাখবে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের এই মন্তব্যের জবাবে জানায়, তারা বিষয়টি নোট করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বিবৃতিটি লক্ষ্য করেছি। তবে তিনি পাল্টা মন্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতের আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ভারতসহ কোনো দেশই অন্য কোনো দেশের পলাতক বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, জাকির নায়েকের সফর অনুমোদনের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করবে। আমার এ বিষয়ে কোনো কর্তৃত্ব নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে তিনি আসতে পারবেন।
ইমিগ্রেশন পুলিশের সূত্র বলছে, ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও পিস টিভির প্রতিষ্ঠাতা জাকির নায়েক ২৬ নভেম্বর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেন। পরদিন তিনি ঢাকায় একটি ইনডোর ইসলামিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা আগারগাঁওয়ের কোনো কনভেনশন সেন্টারে হতে পারে। এরপর ২৮ নভেম্বর পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি আউটডোর সমাবেশে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে তার।
আয়োজক সংস্থা স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, সরকারি অনুমতি ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ডিএমপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি এবং এখনো কোনো অনুষ্ঠানস্থলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় আনুষ্ঠানিক অনুমতি এখনো দেওয়া হয়নি।
সরকার জাকির নায়েকের ঢাকায় আগমনে আপত্তি করছে না বলে জানিয়েছেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তিনি বিশ্বজুড়ে সফর করেন। ঢাকায় এলে তাতে কোনো সমস্যা দেখছি না।
একই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারত তার বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে, কারণ তার জন্ম সেখানেই। আমাদেরও অনেক পলাতক আসামি ভারতে রয়েছে, যাদের ফেরত দেওয়া হয়নি। তাই আমরা তাকে অতিথি হিসেবেই দেখছি; বাংলাদেশ সবসময় অতিথিদের স্বাগত জানায়।
আমারবাঙলা/এফএইচ