রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলে একদিনেই ৩০ জন সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার চারটি পৃথক দপ্তরাদেশে এসব বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়। দপ্তরাদেশে বদলির কারণ হিসেবে ‘প্রশাসনিক স্বার্থ’-এর কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট একাধিক সদস্যের অভিযোগ, এর আড়ালে দীর্ঘদিনের বদলি–বাণিজ্য কার্যক্রম আবারও সক্রিয় হয়েছে।
চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) এর অধীন সিআরবি সদর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ ওমর ফারুকের স্বাক্ষরিত দুটি দপ্তরাদেশে ৭ জন করে মোট ১৪ জন সিপাহিকে বদলি করা হয়। আদেশে বলা হয়, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলি কার্যকর করতে হবে। তা না হলে ১৭ ডিসেম্বর থেকে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের তাৎক্ষণিক অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করা হবে।
একই দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহর স্বাক্ষরে জারি হওয়া আরও দুটি দপ্তরাদেশে ৮ জন করে মোট ১৬ জন সিপাহির বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব আদেশ ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে কার্যকর না হলে ১৪ ডিসেম্বর থেকে অবমুক্ত হিসেবে গণ্য করার কথাও উল্লেখ করা হয়।
দপ্তরাদেশগুলোতে বলা হয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে প্রশাসনিক স্বার্থে এসব বদলি করা হয়েছে।
এর তিন দিন আগে, ৮ ডিসেম্বর, আরএনবির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট পদে রদবদল হয়। পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলামকে পশ্চিমাঞ্চলে এবং পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলামকে পূর্বাঞ্চলে বদলি করা হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখনও নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আরএনবি সদস্য প্রথম আলোকে জানান, চিফ কমান্ড্যান্ট বদলি হওয়ার প্রাক্কালে এই গণবদলির আয়োজন করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ বদলি হয়েছে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের পছন্দের কর্মস্থলে। এসব বদলির জন্য জনপ্রতি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
একজন সদস্য উদাহরণ দিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুই মাস আগে সিপাহি মো. সাদ্দাম হোসেনকে সিআরবিতে বদলি করা হয়। কিন্তু তাঁর পছন্দের কর্মস্থল ছিল আগের স্টেশনটি। এবার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে তিনি সেখানে আবার বদলি হয়েছেন।
আরও একাধিক সদস্য জানান, আরএনবিতে বদলি–বাণিজ্য একটি ‘ওপেন সিক্রেট’। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইনস্পেক্টর পদে বদলিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা, হাবিলদার পদে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং সিপাহি পদে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। পছন্দের জায়গায় যেতে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বদলি ঠেকাতেও অর্থ দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সদস্যদের অভিযোগ, এই অর্থের বড় অংশ পেতেন তৎকালীন চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম। এর পরের অংশ যেত চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহ এবং সিআরবি সদর আরএনবির কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ ওমর ফারুকের কাছে।
আরএনবির একাধিক সদস্য জানান, মো. আশাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে বদলি–বাণিজ্য ও র্যাঙ্ক বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন নয়। তাঁর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে প্রশাসনিক সিনিয়রিটি উপেক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ পদায়ন, বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ইউনিট প্রধান করা, অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে মাসোহারা নেওয়া এবং অর্থ না দিলে সংশ্লিষ্ট ইউনিট থেকে বদলির চাপ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলার তথ্যও জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলাম বলেন, সব বদলি আদেশ বাতিল করা হয়েছে। তাঁর দাবি, চট্টগ্রাম বিভাগের বদলির বিষয়ে তিনি আগে জানতেন না। হঠাৎ করে অনুমোদন চাইলে তিনি বিস্তারিত না দেখেই অনুমোদন দেন। পরে বিষয়টি অনুচিত মনে হওয়ায় আদেশ বাতিলের নির্দেশ দেন।
বদলি–বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এগুলো সঠিক না। প্রশাসনিক স্বার্থেই নিয়মিত বদলি করা হচ্ছিল। অনেকেই দীর্ঘদিন একই জায়গায় ছিলেন, আবার কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল।’ সিপাহি মো. সাদ্দাম হোসেনের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা না।’
তবে বদলি আদেশ বাতিলের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অফিস আদেশ পাওয়া যায়নি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মৌখিকভাবে বদলি আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
আমারবাঙলা/এনইউআ