আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের পক্ষে বিএনপি যে অবস্থান নিয়েছে, তা উপেক্ষা করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
ড. ইউনূসের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, আওয়ামী লীগ কি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবে? জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এরই মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি বলেছে, সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের মতামতকে উপেক্ষা করবো না।
তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আপনার কোনো আপত্তি নেই, জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট দল বা পক্ষকে নেওয়ার জন্য আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি রাজনীতিকদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করছি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তত এখন ভারতে অবস্থান করছেন, এটি কোনো সমস্যা নয়। বাংলাদেশ নিয়ে তার কথা বলাটি সমস্যা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন, আর সেগুলো রাজনীতি নিয়ে। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটিই সমস্যা।
ড. ইউনূস বলেন, তিনি মানুষকে বেরিয়ে আসতে বলছেন এবং ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে বলছেন। তার অডিও ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানে তিনি তাদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি সঙ্গে রাখতে বলছেন, যেন পুলিশ বাধা দিলে তারা বলতে পারেন, বাংলাদেশ সরকার আমেরিকার বিরুদ্ধে। এটি অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ।
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে সরাসরি ভারতকে অনুরোধ করা হলো না কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে (হাসিনা) ফিরিয়ে আনতে আমরা সব আইনি পথ অবলম্বন করবো। আমি মনে করি, কিছু আইনি ধাপ রয়েছে। আমরা সেগুলোর দিকে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা এখনো ওই পর্যায়ে পৌঁছাইনি।
ভারত বাংলাদেশের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে কী হবে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ, এমন কিছু ধারা আছে। কিন্তু ভারত সরকার যদি তাকে সেখানে রাখতে এগুলো প্রয়োগ করে, তাহলে সেটি আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ খুব কম। তাই এই সময়ে হয়তো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবকিছু মীমাংসা করা যাবে না। তবে আমাদের পরে যে সরকারই আসুক না কেন, তারা এটি ক্ষমা করবে না।
এ ছাড়া সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আমেরিকার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন ড. ইউনূস। নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্ভবত তিনি সঠিকভাবে জানেন না। এটি অপপ্রচার; যা বিশ্বজুড়ে চলছে। কিন্তু যখন তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বাস্তবতা সম্পর্কে জানবেন, তখন ট্রাম্প অবাক হবেন যে তাকে কতটা ভিন্নভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়লাভ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও সহায়তায় কেমন প্রভাব ফেলবে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি মনে করি না, শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একজন নতুন প্রেসিডেন্টের কারণে সবকিছু বদলে যাবে। পররাষ্ট্রনীতি ও দেশের সঙ্গে দেশের সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তনের কারণে সাধারণত পরিবর্তিত হয় না।
তা ছাড়া ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যদি কোনো পরিবর্তন ঘটেও তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে এটিও বাংলাদেশ ২, যেটিকে আমরা বলছি নতুন বাংলাদেশ। সুতরাং আমরা অপেক্ষা করবো ও যদি মার্কিন প্রতিনিধিরা এসে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেন ও আমাদের অর্থনীতি যদি ভালো করতে থাকে, তাহলে তাহলে তারা সম্পর্ক ঠিক রাখতে ও উন্নয়নে খুবই আগ্রহী হবে।
সূত্র: দ্য হিন্দু।
আমারবাঙলা/এমআরইউ
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            