জাতীয়
শনিবার নেত্রকোনায় আলোচনা সভা- দোয়া মাহফিল

বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলালুজ্জামান বীরপ্রতীকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

সাজু আহমেদ: ‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন,মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন’। প্রকৃতির ডাকে ভুবন কাঁদিয়ে ওপারে চলে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এলএসি হেলালুজ্জামান বীর প্রতীক। ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছরের ৯ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৭ সালের ১ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানায় এক বনেদী পরিবারে জš§গ্রহণ করেন। ২০২৩ সালের ৩০ মে ভারতীয় দূতবাসের আমন্ত্রনে সংর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সময় আকস্মিক ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেন। তাঁর শেষ যাত্রায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করে সম্মানিত করা হয়, যা তাঁর জীবনের দেশপ্রেম এবং বীরত্বের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা। দেশের পতাকা জড়ানো কফিন এবং বিমানবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের সম্মান তাঁর প্রতি দেশের অঙ্গীকার ও কৃতজ্ঞতার নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য মো. হেলালুজ্জামানকে ‘বীরপ্রতীক’ খেতাবে ভ‚ষিত করা হয়, যা তাঁর বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের চিরন্তন স্বীকৃতি। তাঁর বীরত্বের কাহিনী অনেক সমৃদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর জীবনবাজী রাখা অসামান্য অবদান শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত গৌরবগাঁথা নয়, বরং নেত্রকোনা তথা সমগ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুর করেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলে, তিনি পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সুইসাইড স্কোয়াডে যোগদান করেন। এই বীর যোদ্ধা শেরপুরস্থ কামালপুরের যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ও অসামান্য সাহসিকতার জন্য বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত হন। তার বীর প্রতীক গেজেট নং- ৫৪০। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যমুনা অয়েল কম্পানিতে যোগদান করেন এবং চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে, ধর্মীয় কাজে এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। ১৯৭১ সালে মোঃ হেলালুজ্জামান ঢাকায় বিমান বাহিনী ঘাটিতে প্রকৌশল শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনার জন্য কর্মস্থলে প্রচারণা চালানোর অপরাধে কালো তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে তিনি কর্মস্থল থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যান। ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর ক্র্যাক ডাউন শুরু হলে তিনি পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে যান। পরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হলে তিনি মাহেন্দ্রগঞ্জ সাব-সেক্টরে প্লাটুন কমান্ডর হিসাবে যুদ্ধ করেন। ১১ নম্বর সেক্টরের কামালপুরে হানাদারবাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। আগস্ট মাসে সেক্টর কমান্ডার আবু তাহেরের নেতৃত্বে তাঁরা হিট এন্ড রান পদ্ধতিতে এ ক্যাম্পটি আক্রমণ করে। অন্য গ্রুপ গুলো নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সবচেয়ে বিপদজ্জনক পাঁচ নম্বর বাংকারটি আক্রমণ করতে গিয়ে হেলালুজ্জামানের দলটি পাকবাহিনীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যায়। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হালকা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিনি শত্রু বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন। একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা হত্যা করেন হানাদার বাহিনীর বেশ কয়জন সৈন্যকে। পরবর্তিতে মুক্তিবাহিনীর অন্য দলগুলো সাহায্যে এগিয়ে এলে তারা পাল্টা আক্রমণে যান এবং হানাদার বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেন। একাত্তরের নভেম্বর মাসে মেজর আবু তাহেরের নেতৃত্বে পুনরায় তারা কামালপুর আক্রমণে যান, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় যখন প্রায় নিশ্চিত তখন শত্রুর গোলার আঘাতে মেজর তাহের আহত হলে মুক্তিবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এই অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্র তাঁকে ‘বীর প্রতীক’ খেতাবে ভ‚ষিত করে।
মো. হেলালুজ্জামান নেত্রকোনা জেলার অন্যতম তিনজন খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার একজন। তাঁর দেশপ্রেম, আদর্শ, ত্যাগ, ও বীরত্বের গৌরবময় স্মৃতি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন সংগ্রাম, ও দেশের প্রতি অবিচল মমত্ববোধ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। বীর মুক্তিযোদ্ধা এলএসি হেলালুজ্জামান বীর প্রতীক পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সেইসাথে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মো. হেলালুজ্জামানের দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত এবং মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান স্মৃতিতে চিরজাগরুক রাখার প্রত্যাশায় পরিবারের পক্ষ থেকে নেত্রকোনাবাসীর কাছে ও নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়ের কাছে নেত্রকোনা জেলা সদরের কুড়পার কাইলাটি জেলখানা সড়কটি ‘বীরপ্রতীক হেলালুজ্জামান সড়ক’ নামে নামকরন করার জোর আবেদন জানানো হয়েছে। আগামী শনিবার তাঁর স্মরণে নিজ শহর নেত্রকোনা জেলায় জেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার কাউন্সিলের আয়োজনে আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এমিতে ‘অ্যাডোলেন্স’-এর জয়জয়াকার

বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘোষণা করা হলো ৭৭তম এমি অ্যাওয়ার্ডস।...

রাকসু নির্বাচনে কার কী প্যানেল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-রাকসু নির্বাচনের এ পর্যন্ত নয়টি প্...

হাত না মেলানো : ভারতের ব্যাখ্যা, পাকিস্তানের প্রতিবাদ

আগা সালমান-শাহিন আফ্রিদিরা হয়তো সেটা ভেবেই মাঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন...

লন্ডনে বাংলাদেশি মাকে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য, ছেলের ওপর হামলা

লন্ডনে হামলার শিকার হয়েছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। তরুণের ভাষ্য, তাঁর হিজাব পরা মা...

বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে তিস্তার পানি

টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি আব...

গাজায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল: জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন

গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের একটি স্...

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নির্দেশনা

ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা আরও সুশৃঙ্খল করতে সরকারি হাসপাতালগুলোকে নতুন নির্দেশনা...

ক্রীড়া পরিদপ্তরে দুদকের অভিযান

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ক্রীড়া পরিদপ্তরের বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি প...

এক লাফে ট্যারিফ বাড়ল গড়ে ৪০ শতাংশ

বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করেই নতুন ট্যারিফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়...

বগুড়ায় মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়ার শিবগঞ্জে এক নারী ও তার কলেজপড়ুয়া ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা