মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে একাধিক কৃষকের মালিকানাধীন কৃষিজমিতে পেশীশক্তির জোরে ফসল রোপণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর এলাকায় মনু নদীর চর অঞ্চলে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কৃষকদের পক্ষে সাধনপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে জড়িত ৯ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখিতদের মধ্যে কয়েকজন নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী বলেও জানা গেছে।এর আগে গত ৩০ অক্টোবর অবৈধভাবে বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন মুহিবুর রহমান।
স্থানীয় সূত্র ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, হাজীপুর ইউনিয়নের সাধনপুর গ্রামের বাড়উগাঁও মৌজায় খতিয়ান-৫২৩ এবং দাগ নং—১০৩১, ১০৩২, ১০৩৩, ১০৩৪, ১০৪৪, ১০৪৮, ১০৪৯ ও ১০৫৪—মোট প্রায় দুই একর সাইল রকম জমি মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া, আব্দুল বাছিত বাচ্চু, সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৮ জনের মৌরশী সম্পত্তি। ওই জমিতে হরিচক গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান তার সহযোগী ছব্দর আলী, আব্দুর রশীদ, আব্দুস সালাম সুরুজ, হামিদুর রহমান, মুহিবুর আলী, ইসমাইল মিয়া ও সাধনপুরের শাহিন মিয়াকে নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর অনধিকার প্রবেশ করে জোরপূর্বক আলু, সরিষা ও ডাল রোপণ করেন।এ ঘটনায় ছব্দর আলীকে প্রধান করে ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন কৃষক মুহিবুর রহমান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পায়।এর আগে গত ১৫ মার্চ একই এলাকায় মুহিবুর রহমান গংয়ের কৃষিজমিতে আদালত কর্তৃক জারি করা ১৪৪ ধারা অমান্য করে কয়েক লক্ষ টাকার আলুর ফসল তুলে নিয়ে যায় ছব্দর আলী ও ফজলুর রহমান গং।
তারও আগে, জমি দখলের অভিযোগে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ফজলুর রহমান গংয়ের ৬ জনের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা (নং-৪৯/২০২৫) করেন। মামলার ভিত্তিতে কুলাউড়া থানার এসআই মুহিত মিয়া বিরোধপূর্ণ স্থানে ১৪৪ ধারার নোটিশ জারি করেন। পরে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিলে গত ২৪ আগস্ট আদালত উক্ত জমি মুহিবুর রহমান গংয়ের দখলে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিবাদী পক্ষকে ঐ জমিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।
কিন্তু পুনরায় আদালতের আদেশ অমান্য করে ২৬ নভেম্বর ওই জমিতে হালচাষ ও ফসল রোপণ করে বিবাদী ফজলুর রহমান ও ছব্দর আলী গং। বাঁধা দিতে গেলে তারা মুহিবুর রহমানকে হুমকি প্রদান করেভুক্তভোগী কৃষক মুহিবুর রহমান, নাইওর মিয়া ও সোহেল মিয়া বলেন, প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের দোসর ফজলুর রহমান ও ছব্দর আলী গং আমাদের মৌরসী জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমরা প্রতিবছর এই জমিতে আলুসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করি। কিন্তু গতবারের মতো এবারও তারা পেশীশক্তির জোরে ফসল রোপণ করেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
অভিযোগ সম্পর্কে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা তাদের জমিতে ফসল রোপণ করিনি। আমার অপরাধ—আমি আওয়ামীলীগ করি।ছব্দর আলী বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব ও কিছু খাসজমিতে ফসল রোপণ করেছি। বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে মামলা চলমান। অতীতে সালিশে আমরা তাদের জমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।তদন্ত কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এএসআই মো. ইমদাদুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের সত্যতা মিলেছে।কুলাউড়া থানার ওসি মো. ওমর ফারুক বলেন, আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমার বাঙলা/এসএবি