এস এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: বাগেরহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরি শেষে মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও আয়োজকরা।
_1695293165.jpg)
জেলায় এবার ৬৬৩ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ১৬৮ টি মণ্ডপে পূজা হবে চিতলমারী উপজেলায়। এছাড়া বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১১৬ টি, মোল্লাহাটে ৮৪ টি, মোরেলগঞ্জে ৭৭ টি, ফকিরহাটে ৬৮ টি, কচুয়ায় ৪৪ টি, রামপালে ৪১ টি, মোংলায় ৩৭ টি এবং শরণখোলায় ২৮ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের দুর্গাপূজায় হাকিমপুরে শিকদার বাড়িতে ৫০১ টি প্রতিমা নিয়ে জেলার সবচেয়ে বড় আয়োজন মণ্ডপে। শিকদার বাড়িতে এ মণ্ডপ ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে।
আর বাংলাদেশের দূর্গাপূজাকে ভিন্ন মাত্রা দেয় বাগেরহাটের শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ির এ আয়োজন। কারণ শিকদার বাড়িতে সব থেকে বেশিসংখ্যক প্রতিমা নিয়ে দূর্গা পূজার আয়োজন করা হয়।
এছাড়া পূজার সময় অভিনেতা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি অভিনেতাদের সমাগম ঘটে। তবে করোনা মহামারির কারণে গত তিন বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দূর্গাপূজার আয়োজন ছিল খুবই সীমিত।
_1695293190.jpg)
সীমিত আয়োজনে ভক্ত-দর্শনার্থীদের কমতি ছিল না। তবে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হওয়ায় এ বছর অনেক বড় পরিসরে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হচ্ছে শিকদার বাড়িতে।
আয়োজকরা জানান, এবার ৫০১ টি প্রতিমা নিয়ে দূর্গাপূজা হবে শিকদার বাড়িতে। সত্য, ত্রেতা, দাপড়, কলি এ চারযুগের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এবারের সব থেকে আকর্ষণীয় প্রতিমা হচ্ছে ৬৫ ফুট লম্বা কুম্ভকর্ণ।
ইতোমধ্যে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করে সাদা রং করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। সাদা রং শেষ হলে মূল রংয়ের কাজ শুরু হবে। রংয়ের কাজ শেষ হলে প্রতিমাদের কাপড় পরিধান ও অলঙ্করণ করা হবে। তারপরই পূজার জন্য প্রস্তুত হবে এসব প্রতিমা।
৫০১ টি প্রতিমা তৈরির এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে গেল চার মাস ধরে ১৫ জন প্রতিমা শিল্পী কাজ করছেন। আরও এক মাস পর্যন্ত কাজ করবেন তারা। অর্থ্যাৎ পনের জন প্রতিমা শিল্পির পাঁচ মাসের প্রচেষ্টায় ৫০১ টি প্রতিমাসহ মা দূর্গার মূল প্রতিমার শেট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান প্রতিমা শিল্পি (ভাস্কর) বিজয় কুমার বাছাড়।
_1695293211.jpg)
তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে আমরা শিকদার বাড়ি দূর্গা পূজায় প্রতিমা তৈরি। এখানে মূলত দেশের মধ্যে সব থেকে বেশি প্রতিমা নিয়ে দূর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। আমরা এবার ৫০১ টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছি। এই ৫০১ টি প্রতিমা ছাড়াও মা দূর্গার মূল শেট থাকবে।
সব মিলিয়ে দেশের সব থেকে বেশি প্রতিমা নিয়ে দূর্গাপূজার আয়োজন হবে এখানে। এ আয়োজনের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমি অনেক খুশি। প্রতিমার পাশাপাশি এবারের আয়োজনে শিকদার বাড়িতে থাকবে চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দর্শনার্থীদের আপ্যায়ন, সরকারি নিরাপত্তার ব্যবস্থার পাশপাশি নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন।
এ মণ্ডপকে ঘিরে দূর্ঘাপূজার সময় হাকিমপুর উৎসবের নগরীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশ বিদেশের অগণিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে হাকিমপুর।
_1695293281.jpg)
ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মালম্বী ভক্ত-দর্শনার্থীরা শিকদার বাড়ি পূজা মন্দির দেখতে আসা শুরু করেছেন।
শিকদার বাড়ি দূর্গা পূজার মূল আয়োজক শিল্পপতি লিটন শিকদারের পক্ষে ভাই শিশির শিকদার বলেন, গত তিন বছর আমরা করোনার কারণে বড় আয়োজন করতে পারিনি। এবারের আয়োজনটা অনেক বড় হবে। এবার আমরা ৫০১ টি প্রতিমা নিয়ে দূর্গাপূজার আয়োজন করেছি।
_1695293235.jpg)
এজন্য পুরোদমে কাজ চলছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে। অন্যান্য সময়ের থেকে এবার বেশি সংখ্যক ভক্ত-দর্শনার্থী ও পূন্যার্থীর সমাগম ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে বড় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় শিকদার বাড়িতে। ২০১১ সালে ২৫১ প্রতিমা নিয়ে বিশিষ্ট শিল্পপতি লিটন শিকদার দূর্গাপূজার আয়োজন করে। এরপর থেকে প্রতিবছরই বাড়তে থাকে প্রতিমার সংখ্যা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬৫১ টি।
_1695293254.jpg)
২০১৭ ও ২০১৮ সালে তা পৌছায় ৭০১ টিতে। সবশেষ ২০১৯ সালে ৮০১ টি প্রতিমা নিয়ে দূর্গাপূজার হয়েছিল শিকদার বাড়িতে। এদিকে লাখো দর্শকদের নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল সংযোগের সুবিধার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমান মোবাইল টাওয়ার।
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও রাখা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া শতাধিক পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এবি/এইচএন
 
                                    
                                 
                 
                     
                     
                         
                                                     
                         
                                                     
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                        
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                     
                             
                             
                     
                         
                                 
                                 
                                 
                                 
             
                     
                             
                             
                            