ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়

‘যুক্তরাজ্যে হাসিনা গ্যাংয়ের অবৈধ সম্পদের পাহাড়’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের বিগত ১৬ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকার এখন শুধুই একটি দুর্নীতি, অনিয়ম, অবিচার, নৈরাজ্যের নাম। বিগত বছরগুলোতে দেশকে শুধুই সম্পদ গড়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে। দেশে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে হাসিনা গ্যাং বিদেশে জমিয়েছে সম্পদের পাহাড়।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের নানাবিধ অপকর্ম একেরপর এক সামনে আসতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলয়ের মধ্যে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ বেশ কয়েকজনের যুক্তরাজ্যে বিপুল সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে তারা ৪০ কোটি পাউন্ড যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পরিমাণ অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। আর এই অর্থের পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম অবজারভার ও বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে যৌথ অনুসন্ধান চালায়। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা (ম্যানশন) পর্যন্ত রয়েছে।

যুক্তরাজ্য ও দেশটির বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে এই সম্পত্তির বেশিরভাগ কেনা হয়েছে। কেনা ওই সম্পত্তির অনেকগুলোর মালিকানায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যরা। এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সদস্যদেরও অনেক সম্পত্তির মালিকানা রয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সালমানের পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বা মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা। এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান। সেখানে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে কেনা তার একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে।

এছাড়া গ্রোসভেনর স্কয়ারে এবং এর কাছাকাছি এই পরিবারের আরেক সদস্য আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের আরও চারটি সম্পত্তি রয়েছে। এর মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা। এ বিষয়ে শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের আইনজীবীরা বলেছেন, মানি–লন্ডারিং আইনসহ আর্থিক বিধিবিধান পরিপূর্ণভাবে মেনেই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে দেশে কারাবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া তার ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের ৩শ টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড। এর আগে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বৈশ্বিক সম্পত্তি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে ‘দ্য মিনিস্টার্স মিলিয়ন’ শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে থাকা সম্পত্তির মূল্য আনুমানিক ৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

দেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবও জব্দ করেছে বিএফআইইউ। এ ছাড়া তার ও তার পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ওপর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। পাশাপাশি অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাজনীতিবিদদের বাইরে বাংলাদেশের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরও যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের দুটি সম্পত্তি রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকাটি পরিদর্শনের সময় আহমেদ আকবর সোবহানের এক ছেলের মালিকানাধীন একটি অট্টালিকার সন্ধান পেয়েছে অবজারভার। আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের ছয় সদস্যের ওপর গত ২১ অক্টোবর সরকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়া তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে সিআইডি। দেশটিতে তার সম্পত্তিও জব্দ করা হয়েছে। লন্ডনের কেনসিংটনে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে তিন কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি কিনেছেন তা খতিয়ে দেখতে চায় বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নানা সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুর্নীতির কারণে হারিয়ে যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বিগত সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন এমন অনেকেরও বিপুল সম্পত্তির খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তাদের অনেকে বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। পাচার করা সেই অর্থের কিছু গন্তব্য হয়েছে যুক্তরাজ্যে।

.

আমার বাঙলা/এসএইচ

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

এনসিপির গোপালগঞ্জ কমিটি থেকে নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ ব্যবসায়ীর

কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)...

ইমামবাড়াতে ভক্তদের মাতম

হিজরি সনের মহররম মাস এলেই কুলাউড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লংলা অঞ্চলের ইমামবাড়াগুল...

মুরাদনগরে গণপিটুনিতে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ২

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মাদক ব্যবসার অভিযোগ এনে মা ছেলে ও...

দেশজুড়ে অভিযানে এসএমজিসহ গ্রেপ্তার ১৫৪২

দেশজুড়ে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৫৪২ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের...

এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ডিএসসিসির অভিযান

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে পরিচ্ছন্নত...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা