বাস্তবায়ন করেনি
স্বাস্থ্য
ডা. ফাতেমা দোজার তথ্য গোপন

পিএসসির মতামত বাস্তবায়ন করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ওএসডি) ডা. ফাতেমা দোজাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মতামত দিয়েছিল পিএসসি (সরকারি কর্ম কমিশন)। তবে পিএসসির মতামতের চার মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও তা বাস্তবায়ন করেনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন গড়িমসি আচরণে সরকারি দপ্তরটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. ফাতেমা দোজা ২০১২ সালে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদানের আবেদন করেন। এ লক্ষ্যে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার পদের সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন। পরে বিষয়টি গোপন রেখে পুনরায় ২০১৩ সালের ১১ জুন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার দেড় বছর পর ফের যোগদানের ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (প্রসাশন) নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয়। তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তিনি চাকরি করে যান। এসব ঘটনায় ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি একটি দৈনিকে ‘চাকরি নেই তবুও ১০ বছর পাচ্ছেন বেতন বোনাস’ শিরোনামে ডা. ফাতেমার অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

ডা. ফাতেমা দোজা ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত উত্তর আমেরিকা রেডিওলজি সোসাইটির ১০৮তম বার্ষিক সভা ও বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগদানের আবেদন করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আমন্ত্রণপত্র পরিবর্তন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন। মন্ত্রণালয়কে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার অভিযোগে তাকে দুই দফায় কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো জবাব দেননি। এ ঘটনার বিষয়ে ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে ‘ভয়াবহ জালিয়াতি যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্য দেন ডা. ফাতেমা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ডা. ফাতেমা ২০০৪ সালের ২ মে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে যান। ৪ মাস কারাভোগের পর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১১ সেপ্টেম্বর তিনি পুনরায় কাজে যোগদান করেন। ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার ও কারান্তরীণের তথ্য গোপন করেন তিনি। তথ্য গোপন করে স্বাভাবিক নিয়মে বেতন-ভাতা ও পদোন্নতিসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। তথ্য গোপন করা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের সব অভিযোগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী অসদাচরণ ও পলায়নের দায়ে গুরুদণ্ডস্বরূপ চাকরি থেকে বরখাস্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

ওই দৈনিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কার্যকরের লক্ষ্যে সরকারি চাকরি বিধিমালার ৭(১০)-এর আলোকে পিএসসির মতামত চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১৮ ফেব্রুয়ারি এক প্রস্তাব (চিঠি) পাঠায়।

পিএসসি সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী অসদাচরণ এবং ৩(গ) বিধি মোতাবেক ‘পলায়ন’র অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিধিমালার ৪(৩)(ঘ) অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কর্তৃক গৃহীত গুরুদণ্ড হিসাবে চাকরি থেকে বরখাস্তকরণ মতামত দেয়। ২৭ মার্চ পিএসসি সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে মতামত প্রদানের বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়। চিঠিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু পিএসসি থেকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে মতামত প্রদানের ৪ মাস পার হলেও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডা. ফাতেমা দোজার একাধিক সহকর্মী জানান, ফাতেমা দোজা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। দেশে শেখ হাসিনার আলট্রাসনোগ্রাম ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষায় ডা. ফাতেমা দোজা সশরীরে উপস্থিত থাকতেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারকদের চিকিৎসক দলের সদস্য ছিলেন। ক্ষমতার দাপটে অনিয়মের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় অবৈধভাবে সব সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি করে আসছেন।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিষয়ে কার্যক্রম চলছে।

আমারবাঙলা/জিজি

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন কাতার’ এর ১ম কমিটির ১ম সভা

কাতারের রাজধানী দোহার পাঞ্জাব রেস্টুরেন্টে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামন...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি আবেদন এক লাখ ছাড়াল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্ত...

তুরাগ দক্ষিণের যুব বিভাগের "প্রীতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৫" অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তুরাগ দক্ষিণ থানার যুব বিভাগের উদ্যোগে প্রীতি ফুটবল...

আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমিতে চাষ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে একাধিক কৃষকের মালিকানাধীন...

নোবিপ্রবিতে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘রান ফর ইউনিটি’ ম্যারাথন

কনকনে ঠান্ডায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ৮ শতাধি...

চট্টগ্রামে ৮ কেজি গাঁজাসহ এক মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার পুলিশ বিশেষ অভিযানে ৮ কেজি গাঁজাসহ এক ব্যক্তিকে আটক...

"সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব"

চট্টগ্রাম জেলায় সদ্য যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জগণকে নিয়ে আজ এক বিশেষ দিকনির্দে...

চান্দগাঁওয়ে অস্ত্রসহ বুইস্যার সহযোগী ইমন গ্রেফতার

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় অভিযানে এক দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুকসহ এক যুবককে গ...

এবার চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে মহানগর বিএনপির বিবৃতি

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে মহানগর বিএনপি। বিবৃতি...

শীতে রোজ টক দই খাওয়ার উপকার

শুধু গরমকাল নয়, শীতকালেও টক দই খাওয়া যেতে পারে। শীতের সময় সরাসরি ফ্রিজের দই খ...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা