সংগৃহিত
জাতীয়

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থায়ী শান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রতি সকল প্রকার আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কারণ টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সব ধরনের আগ্রাসন এবং নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘নিউ এজেন্ডা ফর পিস’-কে সমর্থন করে।’

আজ সকালে থাইল্যান্ডে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে (ইউএনসিসি) এসক্যাপ হলে এশিয়া ও প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি সমস্ত যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গাজায় হামলা শুধুমাত্র হতাহত বিশেষ করে নারী ও শিশুদের হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, কিন্তু আলোচনা শান্তি আনতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুদ্ধ এবং গণহত্যা চলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান আনতে পারে না।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তাঁর উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন যা জনগণের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল।

‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সর্বোপরি জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তার প্রতি আমাদের পারস্পরিক সম্মান দেখাতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সফরে ২৪ এপ্রিল এখানে এসেছেন। ২৯ এপ্রিল সকালে তাঁর ব্যাংকক ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষ করে আসিয়ানকে মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান

তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে যেন স্থায়ীভাবে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের সংকটের উৎস মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারেই রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যতদিন সমাধানটি নাগালের বাইরে থাকবে, ততদিন আঞ্চলিক সংযোগ, একীভূতকরণ এবং সমৃদ্ধির জন্যে আমাদের সকল প্রচেষ্টা একটি অদেখা ধাঁধা দ্বারা চিহ্নিত হতে থাকবে। আসুন সেই ধাঁধাটিকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করি।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশু বাংলাদেশে পালিয়ে গেলে মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়।

তিনি বলেন, ‘একটি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে এটি এখন বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে।’ প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে ৪০ হাজার শিশু। এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্টির সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক সেবন ও পাচার, খুন, ছিনতাই রাহাজানির মতো এহেন কর্মকান্ডে জড়িত। এতে পর্যটন শহর কক্সবাজারের পরিবেশ-পরিস্থিতির দিন দিন ক্রমাবনতি ঘটছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের অঞ্চলের ভেতরে এবং এর বাইরে মারাত্বক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে তাঁর অভিন্ন শত্রু দারিদ্র্য ও ক্ষুধার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০০৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৪১.৫১ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

একই সময়ে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্য ২৫.১ থেকে ৫.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বিশেষ নজর দেয়ায় মাতৃ ও শিশুপুষ্টিসহ বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের অগ্রাধিকার আয় বন্টন, সম্পদের মালিকানা এবং সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে বৈষম্য মোকাবেলা করা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে জলবায়ু সংকট, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং আন্তঃসীমান্ত দূষণ মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘২০২৫ সালের পরেও কপ-২৯-এ উচ্চাকাক্সক্ষী জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্যের জন্য আমাদের চাপ দিতে হবে। আমাদের আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা এবং বায়ুর মানের উন্নতিতে সহযোগিতা করতে হবে। ক্রমবর্ধমান চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর জন্য আমাদের সকলকে প্রস্তুত হতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের আগাম সতর্কতার সক্ষমতার উন্নয়নে আমরা ইউএন-এসকাপের সহায়তার প্রশংসা করি।’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী ও অর্জনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের বেশির ভাগ অর্জনই জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘নিম্ন ব-দ্বীপ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতায় ব্যাপক বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই।’

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বনেতা হিসেবে স্বীকৃত।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সাথে আমাদের ঐতিহ্যগত এবং উদ্ভাবনী সমাধানগুলো ভাগ করে নিতে পেরে আমরা খুশি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এই অঞ্চলের উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনে থাকা অর্থনীতির জন্যে কেবল জ্বালানির রূপান্তরই গুরুত্বপূর্ণ।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে তার সরকার পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুষ্ঠু মিশ্রণে দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি বৃত্তাকার এবং নি¤œ-কার্বন-অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ অন্বেষণে আমাদের কাজ চালিয়ে যাবো।’

শেখ হাসিনা অর্থায়ন ও প্রযুক্তিতে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাত থেকে বর্ধিত ও সহজ প্রবেশাধিকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সক্ষমতা গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সরবরাহের জন্য আমি ইউএন-এসকাপকে আমন্ত্রণ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে এবং রেলওয়ে নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ প্রদান করছে।

তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে আমাদের ভৌত ও ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ তার আশপাশের স্থলবেষ্টিত অঞ্চলগুলোকে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব দিয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সকল আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত।’

এর আগে, তিনি ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের (ইউএনসিসি) কনফারেন্স হলে পৌঁছালে দর্শকরা তাঁকে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানান। শ্রোতারা বারবার করতালি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণ শেষে সংশ্লিষ্ট জায়গায় আইসিটি বিভাগের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন’ পরিদর্শন করেন।

পরে সেখানকার বৈঠক কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং এশিয়া ও প্যাসিফিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইএসসিএপি) নির্বাহী সচিব আরমিদা সালসিয়ান আলিসজাহবানা সাক্ষাৎ করেন।

এবি/এইচএন

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

বান্দরবানে পর্যটকের মৃত্যু, ট্যুর এক্সপার্ট গ্রুপের প্রধান গ্রেপ্তার

বান্দরবানের আলীকদমে পর্যটক নিহতের ঘটনায় অনলাইনভিত্তিক ট্রাভেল গ্রুপ ‘ট্...

শতরানের এক ইনিংসে বিরল রেকর্ড মার্করামের; আফ্রিকারও

দক্ষিণ আফ্রিকা মানেই ফাইনালে শিরোপা জয়ের আশা জাগিয়েও হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া। দী...

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়‌কে ১৪ কি‌লো‌মিটার জুড়ে যানজট

পবিত্র ইদুল আযহার ছুটি প্রায় শেষ। তাই সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ একটু বেশি। ঢাকা...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের ত...

ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী  

ইসি যে সময় ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে সে সময়ের জন্য প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী&rs...

হঠাৎ উত্তপ্ত প্রেস ক্লাব, পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

গণজমায়েতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ে প্রব...

যদি ইসরায়েল থামে তবে আমরাও থামবো: ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছ...

নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বদ্ধপরিকর: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা