চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের দুই কর্মকর্তার ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকার একটি সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন।
‘গুলির নির্দেশ দিচ্ছিল তাদের একজন’
পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান জানান, সকালে তিনি ও সহকর্মী বদরুল আরেফিন অফিসে যাওয়ার পথে তিনজন মোটরসাইকেল আরোহী তাদের গাড়ি থামিয়ে হামলা চালায়। তিনি বলেন, হঠাৎ সামনে এসে পথরোধ করে তারা গাড়ির কাচ ভাঙতে থাকে। একজন চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়, আরেকজন বারবার বলছিল—“গুলির, গুলির।”
জীবন বাঁচাতে দুই কর্মকর্তা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পাশের একটি গলিতে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে পালিয়ে যায়।
হুমকি পেয়েছিলেন আগে থেকেই
ঘটনার আগে থেকেই অজ্ঞাত সূত্র থেকে মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছিলেন রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। গত ৬ অক্টোবর বন্দর থানায় করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ রয়েছে ৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম ও চোরাচালান–সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পর থেকেই হুমকির মাত্রা বেড়ে যায় বলে তিনি জানান।
অনিয়ম ধরার জেরেই হামলা ধারণা কাস্টমস প্রশাসনের
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ জানান, সম্প্রতি নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি আমদানির নামে দুটি কনটেইনারে অনিয়ম ধরা পড়ে। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কসমেটিকস আমদানির একটি বড় সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল, যা গত দুই মাসে ভেঙে দেওয়া হয়। এই সব অনিয়ম উন্মোচনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আক্রান্ত দুই কর্মকর্তা। ফলে তারা বিভিন্ন নম্বর থেকে নিয়মিত হুমকি পাচ্ছিলেন। তার ধারণা, এসব সিন্ডিকেটই হামলার সঙ্গে জড়িত।
তদন্তে নেমেছে পুলিশ
ঘটনার পর ডবলমুরিং থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আজাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টিকে পরিকল্পিত হামলা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। হামলাকারীদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও স্থানীয় সূত্রে তথ্য যাচাই চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুতই জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
প্রকাশ্য হামলায় উদ্বেগ
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরনের সশস্ত্র হামলা পুরো প্রশাসনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কর্মকর্তারা জানান, অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়, যা দায়িত্ব পালনকে আরও কঠিন করে তোলে। তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও সংশ্লিষ্ট চোরাচালান সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।
আমারবাঙলা/এসএ