সারাদেশ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের নেপথ্যে ছাত্রী হেনস্তা

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের নেপথ্যে ছাত্রী হেনস্তাস্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর সোমবারও (১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ক্যাম্পাসজুড়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। তবে প্রশাসনিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে দাপ্তরিক কাজ চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ৬টি ইনস্টিটিউটে প্রায় ২৭ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সংঘর্ষের পর গতকাল রোববার সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ক্লাস তেমন হয়নি। তবে গতকালও নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, শহীদ মিনার, গোল চত্বর ও দুই নম্বর গেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্যাম্পাস অনেকটাই ফাঁকা। দু-একটি জায়গায় দু–একজন করে শিক্ষার্থীর দেখা মেলে। যদিও স্বাভাবিক সময়ে এসব এলাকা দিনভর শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখর থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাস ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের বাহন শাটল স্বাভাবিক নিয়মেই চলাচল করছে। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গতকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের বাস নিয়মিত সূচিতে চলাচল করছে। আগামীকাল ক্লাস চলবে কি না, এটি শিগগিরই জানানো হবে।’

এর আগে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের প্রায় ২০০ জনই শিক্ষার্থী।

একটি বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন-এমন খবরে সংঘর্ষের শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মুহূর্তেই দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর। গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে। একপর্যায়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।

সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে তিন শিক্ষার্থী নগরের দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে একজনকে বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় আজ সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওছার মোহাম্মদ হোসেন সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। কেউ এখন পর্যন্ত আটকও নেই।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করছি, আগামীকাল ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক হবে। আহত শিক্ষার্থীদের সবকিছুর দায়দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল বা ক্লিনিক—যে যেখানে রয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে।’

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটের কাছে একটি ভবনে ভাড়া থাকেন। গত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তিনি ওই ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে ভবনের দারোয়ান তাঁকে মারধর করেন। এ সময় ২ নম্বর গেটে থাকা শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধরতে গেলে তিনি পালিয়ে যান। শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধাওয়া করলে স্থানীয় লোকজন ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করেন। তখন সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওই ছাত্রী বলেন, ‘বাসায় আসার পর দারোয়ানকে দরজা খুলতে বললে তিনি খুলছিলেন না। পরে জোরে ডাক দিলে তিনি অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। আমি জবাব দিতে গেলে হঠাৎ চড় মারেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার রুমমেটরা নামলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং লাথি মারতে থাকেন। এ সময় রুমমেট ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন।’

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন জোবরা গ্রামে গিয়ে জড়ো হন। এলাকাবাসীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। শনিবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ সরে যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রাতেই অন্তত ৭০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ১০ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। রাতের ঘটনার পর ২ নম্বর গেট থেকে জোবরা হয়ে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় লোকজন।

Copyright © Amarbangla
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

বাসর রাতে নববধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, স্বামীসহ আটক ৭

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় ১৮ বছর বয়সী এক নববধূকে বাসর রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভি...

নুরের খোঁজ নিলেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ফোন করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপ...

দীর্ঘদিন পর চীনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী

সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতের প্রধান...

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ৩ দলের বৈঠক আজ

আজ যমুনায় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠকে বসবেন প...

চীনে গেলেন পুতিন

চীনে পৌঁছেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় রবিব...

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত : হাইকোর্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স...

বৈঠক শেষে বিএনপি ফুরফুরে, জামায়াত-এনসিপি হতাশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর স...

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠক ‌‌‘গুজব’: আইন উপদেষ্টা

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সেনাপ্রধানের বৈঠককে ‘গুজব ও গুঞ্জন’ বলে জা...

নুরকে আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া হবে : ঢামেক পরিচালক

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে।...

মেসিদের স্তব্ধ করে লিগস কাপ জিতল সিয়াটল

কয় দিন আগে সৌদি সুপার কাপের শিরোপা লড়াইয়ে হেরেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবা...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
খেলা