আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫৪ থানায় বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে। দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দায়িত্ব পাচ্ছেন। লটারির মাধ্যমে তাঁদের পদায়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দেশের ৫২৭ থানার জন্য নতুন ওসি প্রস্তাবিতভাবে পদায়ন করা হয়। নির্বাচনী দায়িত্বে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে প্রথমে ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে সৎ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তার তালিকা নেওয়া হয়। পরে লটারির মাধ্যমে ওসিদের পদায়ন চূড়ান্ত করা হয়।
সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১ জেলায় ১১১ থানা, ঢাকা রেঞ্জে ৯৮, খুলনায় ৬৪, ময়মনসিংহে ৩৬, বরিশালে ৪৬, সিলেটে ৩৯, রাজশাহীতে ৭১ এবং রংপুরে ৬২ থানায় নতুন ওসি প্রস্তাবিত রয়েছেন।
বিতর্কের পাঁচ মাস পর আবার পটিয়ার ওসি নাজমুন নূর
গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠায় পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে প্রত্যাহার করা হয়। পাঁচ মাস পর আবার তাঁকেই পটিয়া থানায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন, পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ করে আহত করেছে। পুলিশ দাবি করেছিল, তাঁরা থানার ভেতরে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের নতুন ওসিরা
সাতকানিয়া—মঞ্জুরুল হক;
লোহাগাড়া—আব্দুল জলিল;
চন্দনাইশ—ইলিয়াছ খান পিপিএম;
পটিয়া—আবু জায়েদ নাজমুন নূর;
বোয়ালখালী—মাহফুজুর রহমান;
বাঁশখালী—খালেদ সাইফুল্লাহ;
আনোয়ারা—জুনায়েত চৌধুরী।
উত্তর চট্টগ্রামে পরিবর্তন
রাঙ্গুনিয়া—আরমান হোসেন;
সন্দ্বীপ—জিয়াউল হক;
মিরসরাই—ফরিদা ইয়াসমিন;
সীতাকুণ্ড—মহিনুল ইসলাম;
হাটহাজারী—জাহিদুর রহমান;
ফটিকছড়ি—মোহাম্মদ সেলিম;
জোরারগঞ্জ—কাজী নাজমুল হক;
দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া—মোহাম্মাদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ;
ভূজপুর—বিপুল চন্দ্র দে;
রাউজান—মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম।
কক্সবাজারে নতুন নেতৃত্ব
উখিয়া—নূর আহমদ;
কুতুবদিয়া—মাহবুবুল হক;
রামু—মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া;
ঈদগাঁও—এটিএম শিফাতুল মজুমদার;
চকরিয়া—মোহাম্মদ মনির হোসেন;
টেকনাফ—সাইফুল ইসলাম;
মহেশখালী—মজিবুর রহমান;
পেকুয়া—খাইরুল আলম;
কক্সবাজার সদর—ছমি উদ্দিন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বড় রদবদল
তিন পার্বত্য জেলায় ২৮ থানায় নতুন ওসি আসছেন।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান— তিন জেলায় একযোগে এত বড় রদবদল সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
রাঙামাটিতে জুড়াছড়ি, কোতোয়ালী, নানিয়ারচর, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালি, বরকল, লংগদু, বিলাইছড়ি, সাজেক, বাঘাইছড়ি ও চন্দ্রঘোনা থানায় নতুন ওসি দায়িত্ব পাচ্ছেন।
খাগড়াছড়িতে মাটিরাঙা, সদর, দিঘীনালা, পানছড়ি, রামগড়, লক্ষীছড়ি, মানিকছড়ি, মহালছড়ি ও গুইমারা থানায় নতুন ওসি।
বান্দরবানে রোয়াংছড়ি, রুমা, সদর, লামা, আলী কদম, থানচি ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনের প্রস্তুতি
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিতে মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া জরুরি ছিল। এ কারণেই এবার লটারিভিত্তিক বড় রদবদল করা হয়েছে।
তবে হঠাৎ এত বিস্তৃত রদবদল নিয়ে রাজনৈতিক ও নাগরিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। কেউ একে প্রশাসনের ‘নির্বাচন প্রস্তুতি’ হিসেবে দেখছেন।
আমার বাঙলা/আরএ